উদীচী’র ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠার ৫৪তম বার্ষিকী উদযাপন করলো লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। “শোষণের বেড়াজালে মানুষের প্রাণ, মুক্তির মিছিলে লড়াইয়ের গান” এই শ্লোগানকে ধারণ করে ২৯ অক্টোবর শনিবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করা হয় উদীচীর ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা।

জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন এবারের আয়োজনের উদ্বোধক এবং অতিথিরা।
জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন এবারের আয়োজনের উদ্বোধক এবং অতিথিরা

উদ্বোধনী আয়োজনের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত ও সংগঠন সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এর সাথে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন এবারের আয়োজনের উদ্বোধক এবং অতিথিরা। উদীচীর ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ৬টি ভিন্ন ক্ষেত্রের ছয়জন কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। তারা হলেন— উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মোহাম্মদ ইদু, উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আখতার হুসেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে গড়ে তোলার অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী মালা রানী সরকার, পাটকল বন্ধের হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ নওশের আলী, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকদের যৌক্তিক ও সফল আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সন্ধ্যা ভৌমিক এবং টিপ পড়ার কারণে পুলিশ কনস্টেবল কর্তৃক প্রকাশ্যে নিগ্রহের শিকার হয়েও রুখে দাঁড়ানো শিক্ষক লতা সমাদ্দার। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ কমিউনিস্ট নেত্রী লীনা চক্রবর্তী। জাতীয় ও সংগঠন সঙ্গীত ছাড়াও দুটি দলীয় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।

অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ৬টি ভিন্ন ক্ষেত্রের ছয়জন কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব

এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান-এর সঞ্চালনায় এ পর্বের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে

এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন উদ্বোধক এবং অতিথিরা। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে নানা ধরনের শোষণ-বঞ্চনা-নিপীড়নের বেড়াজালে ওষ্ঠাগত দেশের মানুষের প্রাণ। একদিকে সমাজে বিরাজ করছে অসম্ভব রকমের বৈষম্য, অসামঞ্জস্যতা, অনিয়ম, অরাজকতা, অন্যদিকে প্রায় সব স্তরেই দেখা যাচ্ছে দলীয় প্রভাব, দুর্বৃত্তায়ন। এমনকি শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ, তাদেরকে অসম্মান বা প্রকাশ্যে নির্যাতন ও প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক, সহিংস আচরণও দিনদিন বেড়েই চলেছে। কৃষিপ্রধান রাষ্ট্র হলেও কৃষকদের মনে শান্তি নেই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য তারা পান না। অথচ পাইকারি বা খুচরা বাজারে ধান ও চালের দাম আকাশছোঁয়া। অর্থাৎ, লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে কিছু অসাধু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দিচ্ছে এই সিন্ডিকেট কিন্তু তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরের কথা, বরং বারবার তাদের কাছেই মাথা নোয়াচ্ছে সরকার।

বক্তারা আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা, কুপমণ্ডকতা এবং অ-বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থার কারণে পদে পদে সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রায় একই কৌশলে বারবার ধর্মীয়ভাবে সংখ্যায় কম এমন সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা, নির্যাতন, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলেও সেসব ঘটনার একটিরও বিচার শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্র। এর ফলে, সেসব সাম্প্রদায়িক জানোয়াররা আরো নির্ভয়ে, আরো নিশ্চিন্তে এমন অপকর্ম করে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে। আলোচনা পর্বে উদীচীর নেতারা জানান, জন্মলগ্ন থেকেই সমাজ জীবনে এ সমস্ত দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে উদীচী। বারবার মৌলবাদী অপশক্তির হামলায় রক্তাক্ত হয়েও সেই লড়াই থেকে সরে আসেননি উদীচীর শিল্পীরা, বরং নতুন উদ্যমে আরো নতুন সাহস সঞ্চার করে এগিয়ে গেছেন অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে। উদীচীর শিল্পীদের কন্ঠে বারবার ধ্বনিত হয়েছে সেই লড়াইয়ের গান। আগামীতেও রাজপথে- গ্রামেগঞ্জে বারবার ধ্বনিত হবে আপোষহীন সংগ্রামের গান, লড়াইয়ের গান, যুদ্ধের গান।

দুর্নীতিবিরোধী গীতি-কাব্য-নাট্যালেখ্য “ধর ধর, চোর চোর”

উদ্বোধনী আলোচনা পর্বের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই পরিবেশিত হয় উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীদের পরিবেশনায় দুর্নীতিবিরোধী গীতি-কাব্য-নাট্যালেখ্য “ধর ধর, চোর চোর”। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম-এর রচনা এবং সুরারোপ করা এ গীতি-কাব্য-নাট্যালেখ্যটি নির্দেশনা দিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এই গীতি-কাব্য-নাট্যালেখ্যে বর্তমান সময়ের বাংলাদেশে মহামারি রুপ নেয়া দুর্নীতির নানা রুপ তুলে ধরার পাশাপাশি এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। গীতি-কাব্য-নাট্যালেখ্য ছাড়াও এ পর্বে মুকাভিনয় পরিবেশন করেন নিরব নিথর, একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম ও হাবিবুল আলম, সুরাইয়া পারভীন, অবিনাশ বাউল এবং জাকির হোসেন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী নায়লা তারান্নুম কাকলী এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাচিক শিল্পী শম্পা দাস, দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যম-এর রিপন এবং ছোঁয়া। এছাড়া, উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের পরিবেশনায় ছিল সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী পথনাটক “অজ্ঞাতনামা”। নাটকটি রচনা করেছেন উদীচীর সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী এবং নির্দেশনা দিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার। এছাড়া, শেষাংশে প্রদর্শিত হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লী উচ্ছেদের ঘটনার উপর ভিত্তি করে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র “ভূমিহীন ভূমিপুত্র”। অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কংকন নাগ এবং হালিমা নূর পাপন।

Three days left to cultural convention

Udichi is now rushing towards the south Asian cultural convention 2016. We are gathering everyday at udichi central office for planning, communication, publication, meeting etc. Registration is already started and rehearsal for our best performance is going on. Some of the guests of the program is already in Bangladesh.