Written statement of South Asian Cultural Convention at Press Conference

সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন ২০১৬

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে আপনাদের সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ উভয়ই বিশ্ব মানবতার শত্র“। বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই সাম্প্রদায়িকতার বীভৎস রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতা আজ মৌলবাদের ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ‘ভাগ কর এবং শাসন কর’- এই নীতি কাজে লাগিয়ে সা¤্রাজ্যবাদ উগ্র ধর্মীয় মতবাদের বিস্তৃতি ঘটিয়ে মানুষের মনে ধর্মীয় বিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ ও প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার প্রসার ঘটাচ্ছে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অনৈতিক আচরণ মানুষকে করে তুলেছে অমানবিক। তার স্বাভাবিক মানবিক গুণাবলি ঢাকা পড়ে যাচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির কাঠামোর চাপে। দুর্নীতি, লালসা, হিংসা, পরস্পর বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি ঢেকে দিচ্ছে দেশপ্রেম, মানবপ্রেমের মতো সকল সদর্থক মূল্যবোধকে। উদীচী মনে করে, এই গভীর অন্ধকার থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি আলোক অভিযান সফল করে তুলতে হলে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কৃতির শক্তিতে এক নতুন উজ্জীবন ঘটাতে হবে। উদীচী গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে, শিল্পী ও শিল্পের মৌলিক ও সর্বপ্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সমাজকে নিরন্তর প্রগতি অভিমুখে নিয়ে যাওয়া, মানুষের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত হওয়া। সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ উভয়ের বিরুদ্ধেই একই সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখা জরুরী কর্তব্য বলে আমরা মনে করি। এই দায়িত্ববোধ থেকেই উদীচী দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ এবং জাপানে কর্মরত লেখক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
সে উপলব্ধি থেকেই সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা এই দুইয়ের বিরুদ্ধে একইসাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় নিয়ে আগামী ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্র“য়ারি “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন” আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আগামী ১৯ ফেব্র“য়ারি বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে কনভেনশনের উদ্বোধন করবেন তিন প্রবীণ বিপ্লবী কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল, কামাক্ষ্যা রায়চৌধুরী এবং অধ্যাপক যতীন সরকার। সমাজে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটানো এবং সাম্রাজ্যবাদের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই তিনজন মহান পুরুষ। কনভেনশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। এ কনভেনশনে এমন একজনকে হাজির করা হবে যিনি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন, তিনি এরশাদ আলী। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতম গণহত্যাগুলোর অন্যতম খুলনার চুকনগরে অসংখ্য মৃতদেহের মধ্য থেকে একটি শিশুকে উদ্ধার করে তাকে স্ব-ধর্মমতে বড় করে মানবতার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন তিনি। উদ্বোধনী পর্বের পর তিনদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ধরণ ও নানা অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদের আলোচনা, মতামত ও সম্মতির ভিত্তিতে তৈরি করা “ঢাকা ঘোষণা” পাঠ করা হবে কনভেনশনের শেষ দিন ২১ ফেব্র“য়ারি বিকেলে। সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে নিরবচ্ছিন্ন ও যুথবদ্ধ লড়াই-সংগ্রাম গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হবে এ ঘোষণায়।

প্রিয় বন্ধুরা,
উদীচী আয়োজিত দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশনে অংশগ্রহণের বিষয়টি এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আফগানিস্তান ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ। ওইসব দেশে সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে লিপ্ত বিভিন্ন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উদীচীর এ কনভেনশনে যোগ দেবেন। এর মধ্যে ভারত থেকে অংশ নেবে বেশ কয়েকটি সংগঠন, যারা তাদের বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা তুলে ধরবেন। এছাড়াও, থাকবে একক পরিবেশনা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভেন্দু মাইতি, শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, সাংস্কৃতিক সংগঠক রতন বসু মজুমদার, বিশিষ্ট সাংবাদিক মালিনী ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত কলামিস্ট রতন খাসনবীশ প্রমূখ কনভেনশনে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া, পাকিস্তান থেকে আসবেন প্রগতিশীল সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাহাত সাঈদ, জাপান থেকে উপস্থিত থাকবেন লোক সংস্কৃতি গবেষক নাওমি ওয়াতানাবে। এছাড়া, অন্যান্য কয়েকটি দেশ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন উদীচী আয়োজিত এ সাংস্কৃতিক কনভেনশনে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
দক্ষিণ এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দেশগুলোর সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রগতিশীল সংস্কৃতি কর্মীরা ছাড়াও বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রগতিশীল লড়াই-সংগ্রামে নিয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ অংশ নেবেন উদীচী আয়োজিত “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”। উপস্থিত থাকবেন সারাদেশে উদীচীর তিন শতাধিক শাখা সংগঠন থেকে আগত প্রতিনিধিরা। এ কনভেনশন সফলভাবে আয়োজন করার লক্ষ্যে উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানীকে চেয়ারম্যান করে গঠিত প্রস্তুতি কমিটি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কনভেনশনের প্রস্তুতি পর্বে এরই মধ্যে আটটি সাংগঠনিক বিভাগে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রাম বিষয়ে বিভাগীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। উন্মুক্ত বিভাগীয় সেমিনারগুলো থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে কনভেনশনের মূল ধারণাপত্র।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
“সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”-এর অংশ হিসেবে উন্মুক্ত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আয়োজন করেছে উদীচী। উদীচীর আহবানে সাড়া দিয়ে এ প্রদর্শনীরে জন্য এরই মধ্যে নিজেদের অঙ্কিত চিত্রকর্মের আলোকচিত্র জমা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী। চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে সেরা চিত্রকর্ম অঙ্কনকারীকে কনভেনশন চলাকালে উদীচীর পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশীয় সম্মাননা দেয়া হবে। বাংলাদেশের শিল্পীরা ছাড়া কনভেনশনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশের চিত্রশিল্পীরাও এ প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন।

প্রিয় গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ,
সাম্প্রদায়িকতা ও সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম জোরদার ও অর্থবহ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মীদের শক্তির ঐক্য আজ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে উদীচী। কেননা সংস্কৃতির দুর্দিন রাজনীতির দুর্দিনের চেয়েও ভয়াবহ। উদীচী মনে করে সাম্প্রদায়িকতা ও সা¤্রাজ্যবাদ উভয়ই বিশ্ব মানবতার শত্র“। বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই সাম্প্রদায়িকতার বীভৎস রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সংস্কৃতির বিনিময় এবং সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে উদীচী দক্ষিণ এশিয়ায় শিল্পীকর্মীদের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চায়। আর, সে লক্ষ্যেই আয়োজিত হচ্ছে “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”।

প্রিয় বন্ধুগণ,
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বিগত দিনে তার সামগ্রিক কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের অকুন্ঠ সহযোগিতা পেয়েছে। উদীচী আশা করে এই সহযোগিতা আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। আপনাদেরকে এবং আপনাদের মাধ্যমে জনগণকে আমরা “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ সান্ধ্য অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। কনভেনশনের পুরো অনুষ্ঠান আপনাদের স্ব স্ব গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করে সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত প্রগতিশীল, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলায় সহযোগিতা করবেন- এই প্রত্যাশা করি। যত বাধা বিঘœই আসুক না কেন, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে উদীচীর সংগ্রাম চলছে, চলবেই।

ধন্যবাদসহ-

প্রবীর সরদার
সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সংসদ
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *