বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে গান, আবৃত্তি, নাচের মাধ্যমে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যার দিন, ১৪ ডিসেম্বর বুধবার বিকাল ৫টায় উদীচী চত্বরে (১৪/২, তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে) আয়োজন করা হয় স্মরণ অনুষ্ঠান। শুরুতেই “আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে” এবং “মুক্তির মন্দির সোপান তলে” গান দুটি সমবেতভাবে পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। এ পর্বের শুরুতে আলোচনা করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরীর সন্তান, আসিফ মুনির তন্ময়। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডেরও বিচার শুরু হয়। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই রায় কার্যকরের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। বিদেশে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সমাজের প্রগতিশীল মানুষদের আহ্বান জানান আসিফ মুনির তন্ময়।
এরপর বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে জাতিকে মেধাশূন্য করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা আজও চলছে। দেশের তরুণ প্রজন্মকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চলছেই। জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সেই অবদানকে শুরু স্মরণ করলেই হবে না, তাদের আদর্শ অনুসরণ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে বলেও মন্তব্য করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক। আলোচনা পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি নিবাস দে, হাবিবুল আলম, প্রবীর সরদার এবং জামসেদ আনোয়ার তপন। আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান।
আলোচনা সভার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মায়েশা সুলতানা উর্বী, অনিমা সায়মা, সোনিয়া আক্তার এবং আনিকা মাহমুদ রীমা। এছাড়া, আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য শিখা সেন গুপ্তা এবং বাড্ডা শাখার বাচিক শিল্পী মরিয়ম বেগম তৃষা। শেষে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।
এর আগে, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সকাল ৭.৩০টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে এবং রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ অর্পন করেন উদীচীর নেতৃবৃন্দ।