সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি, মৌলবাদী গোষ্ঠীর মূলোৎপাটন এবং বাংলার মাটিতে তাদের সব ধরনের কর্মকা- নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নেত্রকোনা বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। নেত্রকোনা হত্যাকা-ের দশম বার্ষিকীতে নিহতদের স্মরণে গত ৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা। ২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ঘৃণ্য হামলায় প্রাণ হারান উদীচী’র তৎকালীন সহ-সাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সংগঠন বিষয়ক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলীসহ আটজন।
আলোচনা সভার শুরুতে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী’র শিল্পীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদারের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর সদস্য প্রদীপ ঘোষ এবং কেন্দ্র ও ঢাকা মহানগর সংসদের সদস্য মামুনুর রশিদ। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান ইকবালের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা বলেন, ৭১’র পরাজিত শক্তি আবারো বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমানে কিছুটা চাপে থাকলেও মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিগোষ্ঠী নানাভাবে তাদের অপকৌশল প্রয়োগে সচেষ্ট রয়েছে। তাদের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার উৎস বন্ধ করতে না পারলে এদেশকে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য তাদের যে অপচেষ্টা তা রোখা কঠিন হবে। তবে, এদেশের প্রগতিশীল জনতা সেই চেষ্টা কখনোই সফল হতে দেবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ের লাগোয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন শতদল গোষ্ঠীর কার্যালয়ে একটি বোমা পড়ে থাকতে দেখে এক পথচারী। বিষয়টি জানাজানি হলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি খাজা হায়দার হোসেন এবং সুদীপ্তা পাল শেলীসহ উদীচী’র নেতৃবৃন্দও ভীড় করেন ঘটনাটি দেখতে। এর ঘন্টাখানেক পর সাইকেল আরোহী এক যুবক নিরাপত্তা বেস্টনী পেরিয়ে উদীচী নেতৃবৃন্দের কাছাকাছি পৌঁছেই তার সাইকেলে বহন করে আনা বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটালে ঘটনাস্থলেই মারা যান উদীচী নেত্রকোনা জেলা সংসদের সেসময়কার সহ-সাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেনসহ সাতজন। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন নয়জন পুলিশ সদস্য এবং উদীচী’র বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীসহ অন্তত ৬০ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান সুদীপ্তা পাল শেলী।