নিম্নতম মজুরি ৮০০০ টাকা নির্ধারণসহ গার্মেন্ট শ্রমিকদের দশ দফা মেনে নাও
“নিম্নতম মজুরি ৮০০০ টাকা নির্ধারণসহ গার্মেন্ট শ্রমিকদের দশ দফা মেনে নাও”। এই দাবিকে সামনে রেখে মে দিবসে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
গত ১মে বিকেল ৪টায় তেজগাঁও এলাকার নাবিস্কো শহীদ মিনারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এবারের শ্রমিক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল সাভার ট্রেজেডি। সমাবেশে বক্তারা সাভারের রানা প্লাজায় দূর্ঘটনা বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, গর্মেন্ট সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন তৈরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ঢাকা মহানগর ছাত্র ইউনিয়নের স্কুল ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অনিক রায় সাভারের রানা প্লাজার দূর্ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, মুনাফার জন্য এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। অনেক বিদেশী চ্যানেলে সেরকমটা বলা হয়েছে। অথচ এই সোহেল রানার বিরুদ্ধে যে কেস ফাইল করা হয়েছে তাতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদন্ড হতে পারে।
জলি তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, শুধুমাত্র মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করলে হবে না রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও লড়াই করতে হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান বলেন, বিজিএমইএ বলেছিল গার্মেন্ট সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন চালু হলে গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। এখনো গার্মেন্টে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু বিদেশে ইতিমধ্যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হয়েছে। এর দায় বিজিএমইএর। আজকে প্রধান ইস্যু শ্রমিকদের ইস্যু। এ রকম অবস্থায় অন্য কোন ইস্যু প্রধান্য পেতে পারে না।
আবদুল্লাহ আল রাফী রতন বলেন, রানা প্লাজায় দু’জন নারী শ্রমিক সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তার মানে আমাদের নারী শ্রমিকরা প্রসুতিকালীন ছুটি পাচ্ছে না। গার্মেন্ট কারখানাগুলো টিকিয়ে রেখেছেন আমাদের নারী শ্রমিকরা। অনেকে আবার ধর্মের নামে আমাদের নারী শ্রমিকদের গ্রামে ফিরিয়ে দিতে চান। এ ধরনের চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।
তাজরীন গার্মেন্টে শতাধিক শ্রমিক পুড়েছে আর তার মালিক বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিজিএমইএতে বসে আছে। এ সরকার মালিকদের সরকার শ্রমিকদের সরকার নয়।
তিনি আরো বলেন, রানার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রানা প্লাজার যত নিহত আহত শ্রমিক আছে তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম বলেন, শ্রমিক বাঁচলে বাংলাদেশ বাাঁচবে। শ্রমিক ও মেহেনতী মানুষের উন্নতি এলে বাংলাদেশের উন্নতি হবে। এটা বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মনে প্রানে বিশ্বাস করে।
সৈয়দ আবু জাফর বলেন, শ্রমিক শ্রেণীর কোন দেশ নাই জাত নাই। শ্রমিক শ্রেণীর একটাই আওয়াজ দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই কর।
তিনি আরও বলেন গত ৪০ বছরে মে দিবস পালন করেও এখন পযর্ন্ত শ্রমিকের অধিকার আদায় করা হয়নি। তিনি মে দিবসে রানা প্লাজার দূর্ঘটনার নামে শপথ করে বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে কোন শ্রমিক কাজ করতে যেয়ে যেন মারা না যায়।
তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ অর্জন করেন শ্রমিকরা। কিন্তু এই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে যাদের অবদান তারা বিভিন্ন সময় দূর্ঘটনার সম্মূখীন হয়। ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রানা প্লাজার মত ২০০ ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বাড়ি ভাড়া প্রসঙ্গে বলেন, বেতনের ৮০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অন্য দিকে বাড়ি ভাড়া ১০০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। তাহলে দেখা যায় মানুষের আয় আরো ২০ ভাগ কমেছে। গার্মেন্টসে ট্রেড ইউনিয়নকে শক্তিশালী করতে পারলে রানা প্লাজার মত এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। যুদ্ধাপরাধীদের যেভাবে বিচার হচ্ছে তেমনি অপরাধী গার্মেন্ট মালিকদেরও বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের পরিবারকে ৬০ বছরের চাকুরীর হিসাব করে তাদের পরিবারকে বেতন অনুযায়ী টাকা দিতে হবে। এ টাকা দিতে হবে মালিকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। এছাড়া প্রত্যেক গার্মেন্টে ট্রেড ইউনিয়ন তৈরি করতে হবে এবং শ্রমিকদের থেকে সংসদ নির্বাচিত করতে হবে। তাহলে শ্রমিকদের আত্মা শান্তি পাবে।
এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, মিরাজ হোসেন সহ-সভাপতি তেজগাঁও আঞ্চলিক কমিটি, আমীর হামজা রিক্সা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, ইসলাম উদ্দিন তেজগাঁও আঞ্চলিক কমিটির নেতা, সুরুচি বিশ্বাস মিতা সহ-সভাপতি আঞ্চলিক কমিটি, প্রবীর সরদার সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী প্রমূখ।
আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।