মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিসের প্রতিবাদ

মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিসের প্রতিবাদ উদীচীর:
সব ষড়যন্ত্র রুখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল নামানোর আহ্বান

বাঙালির পহেলা বৈশাখ, বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। বহু বছর ধরে রাজধানীসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে রঙ্গিন এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল অশুভ, অকল্যাণকর, কূপম-ুকতাকে দূরীভূত করার আহ্বান জানায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলার আপামর জনসাধারণ। নানা সময়ে নানাভাবে এ শোভাযাত্রাসহ বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনকে বন্ধ করা বা সঙ্কুচিত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার নতুন এক চক্রান্ত শুরু হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, কোন এক আইনজীবী মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের জন্য আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। একে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, একটি বিশেষ ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে উল্লেখ করাসহ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অনুসৃত ধর্মের জন্য অবমাননাকর বলেও দাবি তার। এ ধরনের অমূলক এবং ভিত্তিহীন আইনি নোটিস প্রদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এক প্রতিবাদলিপিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, উদীচী দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করে এই আইনি নোটিস প্রদান মূলত বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য মৌলবাদী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর যে ধারাবাহিক অপচেষ্টা তারই অংশমাত্র।

বিবৃতিতে উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, যে ব্যক্তি ‘মঙ্গল’ শব্দটিকে কোন একটি বিশেষ ধর্মের শব্দ বলে আখ্যায়িত করতে পারেন তিনি যে আবহমান বাঙলার ঐতিহ্যবাহী অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করেন না তা স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়। আর এমন চিন্তাধারা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূলনীতির চেতনার সাথেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই এই আইনি নোটিস প্রদানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ওই আইনজীবীই রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছেন বলে মনে করে উদীচী। অবিলম্বে ওই আইনজীবীকে শাস্তির আওতায় আনা এবং তার আইনজীবী সনদ বাতিলের দাবি জানিয়েছে উদীচী।

রাজধানী ছাড়াও যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে উদীচীর উদ্যোগে অপরাপর প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে বহু বছর ধরে মহাসমারোহে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন হয়ে আসছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন অধ্যাপক বদিউর রহমান ও অমিত রঞ্জন দে। তারা জানান, এবছরও সে আয়োজন শুধু অব্যাহতই থাকবে না, বরং তার ব্যপ্তি আরো বৃদ্ধি পাবে। যতো বাধাই আসুক, বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রক্ষার সে পথ থেকে উদীচীকে সরানো যাবে না। কোন ধর্মান্ধ, মৌলবাদী অপশক্তির চক্রান্তের কাছে মাথা নত করে বাংলার সাধারণ মানুষ এদেশের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পালন থেকে কখনোই পিছিয়ে আসবে না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া, এ বিষয়ে সব প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সোচ্চার ভূমিকা পালনের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *