
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রতিবাদ এবং মূল প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলন। ২০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়ে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে যান জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছে ২৩টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন।
আন্দোলনের পক্ষ থেকে উপদেষ্টার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আবু সাঈদ এবং রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি ড. মকবুল হোসেন। স্মারকলিপি প্রদানকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এ বিষয়ে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এসময় জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক মাহমুদ সেলিম বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ মহলের চাপে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের গেজেটকৃত সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। মহলটি সঙ্গীত শিক্ষকের পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে- অথচ প্রতিটি বিদ্যালয়ে পূর্ব থেকেই ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োজিত আছেন। শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতি ও শরীরচর্চার যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা বিশ্বের সকল শিক্ষাবিদ ও মনস্তত্ত্ববিদ দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন।” কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আবু সাঈদ বলেন, “যথেষ্ট যৌক্তিক কারণেই গত ২৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। কিন্তু গত ০২ নভেম্বর ২০২৫, সেই প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়, যা একটি আত্মঘাতী ও পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্ত। এটি কেবল শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ সবল জাতি গঠনে অন্তরায় নয়, এটি একটি মনন-বোধ-বিবেক-বুদ্ধিহীন রোবট প্রজন্ম গড়ার ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করারই সামিল।” রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি ড. মকবুল হোসেন বলেন, “সংগীত প্রথম দৃষ্টিতে, শুধুই বিনোদন মনে হলেও গবেষণা বলছে, এটি এক প্রকার ‘মস্তিষ্কের ব্যায়াম’। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে. যেসব শিশু সৃজনশীল কাজের সুযোগ পায়, তারা মেধাবী ও বুদ্ধিমান হয়। ধর্মের নামে যারা সঙ্গীত ও শরীরচর্চা শিক্ষা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন তারা একটি মেধাহীন, বোধহীন অবিকশিত-বুদ্ধির প্রজন্ম গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র করছেন।”
অবিলম্বে গত ০২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে ২৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখের মূল প্রজ্ঞাপনটি পুনর্বহাল করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত, চারুকলা ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ করার দাবিও জানান জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই সঙ্গীত, চারুকলা ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়কে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান তারা।
এদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রতিবাদে আগামী ২২ নভেম্বর শনিবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ করবে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলন। সেখানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা শিশুদের সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা ছাড়াও গান, নাচ, আবৃত্তিসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা। জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছে ২৩টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক, ছাত্র ও শিশু সংগঠন।
জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনে যুক্ত সংগঠনসমূহ: বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, নবান্ন উৎসব উদযাপন পরিষদ, বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ, রাধারমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, শিল্পকলা বিদ্যালয় ঐক্যজোট, বাংলাদেশ বাউল ও লোক শিল্পী সংস্থা, জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদ, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ভয়েস অব আর্টিস্ট, প্রাচ্যনাট, বিশ্ববীণা, আনন্দন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কলেজ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ।
