আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বিশেষ মহলের চাপে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের গেজেটকৃত সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। মহলটি সঙ্গীত শিক্ষকের পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে- অথচ প্রতিটি বিদ্যালয়ে পূর্ব থেকেই ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োজিত আছেন।
শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতি ও শরীরচর্চার যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা বিশ্বের সকল শিক্ষাবিদ ও মনস্তত্ত্ববিদ দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। সঙ্গত কারণে গত ২৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। গত ০২ নভেম্বর ২০২৫, সেই প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়, যা একটি আত্মঘাতী ও পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্ত। এটি কেবল শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ সবল জাতি গঠনে অন্তরায় নয়, এটি একটি মনন-বোধ-বিবেক-বুদ্ধিহীন রোবট প্রজন্ম গড়ার ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করারই সামিল।
আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, প্রাথমিক শিক্ষা কেবল সাক্ষরজ্ঞান বা পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করার ক্ষেত্র নয়; এটি শিশুর নৈতিক, সাংস্কৃতিক, মানবিক ও মানসিক বিকাশের মূলভিত্তি। সঙ্গীত শিশু-হৃদয়ে সৌন্দর্যবোধ, সহনশীলতা ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে। শারীরিক শিক্ষা তাকে শেখায় শৃঙ্খলা ও দলগত সহযোগিতা। আজকের ডিজিটাল যুগের বাস্তবতায় শিশুরা যখন যন্ত্রের পর্দায় আসক্ত হয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ছেন, স্ক্রিন-টাইম যখন তাদের স্বাভাবিক সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে; তখন সঙ্গীত ও শরীরচর্চাই হতে পারে তাদের সৃজনশীলতা, মনোযোগ ও মানসিক দক্ষতা বিকাশের প্রধান হাতিয়ার।
যখন শিক্ষায় অগ্রসর জাপান, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড এবং মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, কাতার, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ায় সঙ্গীত, চারুকলা ও শরীরচর্চাকে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তখন বাংলাদেশে এই উল্টোযাত্রা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা স্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে গত ০২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে ২৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখের মূল প্রজ্ঞাপনটি পুনর্বহাল করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত, চারুকলা ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই সঙ্গীত, চারুকলা ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়কে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনে যুক্ত সংগঠনসমূহ: বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, নবান্ন উৎসব উদযাপন পরিষদ, বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ, রাধারমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, শিল্পকলা বিদ্যালয় জোট, বাংলাদেশ বাউল ও লোক শিল্পী সংস্থা, জহির রায়হান চলচিত্র সংসদ, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ভয়েস অব আর্টিস্ট, প্রাচ্যনাট, বিশ্ববীণা, আনন্দন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
বিবৃতিদাতাদের নাম:
১) সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
২) অধ্যাপক কাজী মদিনা
৩) নূর মোহাম্মদ তালুকদার
৪) সাইদুর রহমান বয়াতী
৫) শিল্পী আনোয়ার হোসেন
৬) মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
৭) আবেদ খান
৮) আখতার হুসেন
৯) সেলিনা হোসেন
১০) নির্মলেন্দু গুণ
১১) আবুল মোমেন
১২) আবুল মনসুর
১৩) ডা. ফওজিয়া মোসলেম
১৪) ডা. মাখদুমা নারগিস রত্না
১৫) জেড আই খান পান্না
১৬) এ এন রাশেদা
১৭) এম এম আকাশ
১৮) নিরঞ্জন অধিকারী
১৯) মানবেন্দ্র বটব্যাল
২০) সোহরাব হাসান (সাংবাদিক)
২১) মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু (সাংবাদিক)
২২) আবু সাঈদ খান (সাংবাদিক)
২৩) দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
২৪) মোহম্মদ রফিক-উজ-জামান
২৫) প্রকৌশলী গোলাম রব্বানী
২৬) অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (সাধারণ সম্পাদক, বাকবিশিস)
২৭) অধ্যাপক (অব.) ড.আজিজুর রহমান
২৮) মশিউদ্দিন শাকের (চলচ্চিত্র নির্মাতা)
২৯) শিল্পী আব্দুল মান্নান
৩০) আশরাফুল আলম (আবৃত্তিকার)
৩১) ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়
৩২) গোলাম সরওয়ার (নাট্য ব্যক্তিত্ব)
৩৩) খুশি কবির
৩৪) ডা. কাজী তামান্না
৩৫) মঞ্জুশ্রী দাশগুপ্তা
৩৬) অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ
৩৭) অধ্যাপক শফি আহমেদ
৩৮) ডা. ঊষা মং থুয়াই
৩৯) মাহমুদ সেলিম
৪০) প্রবীর সরদার
৪১) সুখেন রায়
৪২) রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা
৪৩) শফি মন্ডল (বাউল শিল্পী)
৪৪) জাকির তালুকদার
৪৫) সুজিত মোস্তফা
৪৬) ড. মকবুল হোসেন
৪৭) ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী
৪৮) মহাদেব ঘোষ
৪৯) বিশ্বজিৎ রায় (রাধারমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র)
৫০) রফিউর রাব্বি
৫১) কামরুন্নাহার ডানা (ক্রিড়াবিদ)
৫২) তামান্না রহামান (নৃত্য শিল্পী)
৫৩) ডা. লেনিন চৌধুরী
৫৪) স্থপতি সফিউদ্দিন আহমেদ (বসন্ত উৎসব)
৫৫) শাশ্বত ভট্টাচার্য
৫৬) প্রণয় সাহা, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর
৫৭) শিল্পী জাহিদ মুস্তাফা
৫৮) শিল্পী অশোক কর্মকার
৫৯) রাশেদ হাসান (আবৃত্তিকার)
৬০) শিল্পী মাসুক হেলাল
৬১) আজাদ আবুল কালাম (নাট্য ব্যক্তিত্ব)
৬২) বেলায়েত হোসেন
৬৩) মানজার চৌধুরী সুইট (গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ)
৬৪) অমিত রঞ্জন দে
৬৫) সঙ্গীতা ইমাম
৬৬) নাঈম হাসান সুজা (নবান্ন উৎসব)
৬৭) রুস্তম আলী খোকন
৬৮) রেজাউল কবীর, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর
৬৯) এ কে আজাদ, আনন্দন
৭০) প্রদীপ ঘোষ (জহির রায়হান চলচিত্র সংসদ)
৭১) জাহাঙ্গীর হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি
৭২) নূরে আলম বিপ্লব -সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি
৭৩) মো: আবুল কাশেম, সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি
৭৪) মোস্তাফিজুর রহমান শাইন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি
৭৫) মুহাম্মদ ইলিয়াছ হোসাইন, সাধারন সম্পাদক
৭৬) তুষার চন্দন, শিল্পকলা বিদ্যালয় জোট
৭৭) শাহিনুর আল-আমীন, সভাপতি, বাংলাদেশে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ
৭৮) হাসান তারেক (প্রকাশক)
৭৯) মাহির শাহরিয়ার রেজা (ছাত্র ইউনিয়ন)
৮০) বাহাউদ্দিন শুভ (ছাত্র ইউনিয়ন)
