“সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”সহ বিভিন্ন কর্মসূচিকে সামনে রেখে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গত ০৬ ফেব্র“য়ারি শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উদীচীর পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী। তিনি বলেন, ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর শিল্পীসংগ্রামী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-কৃষক নেতা সত্যেন সেন ও রণেশ দাশগুপ্তের নেতৃত্বে উদীচী প্রতিষ্ঠিত। জন্মলগ্ন থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে উদীচী। একইসাথে বিভিন্ন ধারা ও ধরনের সংস্কৃতির সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রসারে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় কর্পোরেট পুঁজির অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের এবং কাজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এর বিরুদ্ধে সামগ্রিক লড়াইয়ের বিকল্প নেই।
সেই সামগ্রিক লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় আয়োজিত নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা তুলে ধরেন কামাল লোহানী। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আগামী ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্র“য়ারি আয়োজিত “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”। তিনি জানান, আগামী ১৯ ফেব্র“য়ারি বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে উদ্বোধন করা হবে উদীচী আয়োজিত তিন দিনব্যাপী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশনের। তিন প্রবীণ বিপ্লবী কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল, কামাক্ষ্যা রায়চোধুরী এবং অধ্যাপক যতীন সরকার কনভেনশনের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর তিনদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ধরণ ও নানা অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠনকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। সারাদেশে উদীচীর তিন শতাধিক শাখা সংগঠন থেকে আগত প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেবেন। এছাড়া থাকবে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের পরিবেশনা। তিনদিন ধরে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা “ঢাকা ঘোষণা”। এরই মধ্যে এ কনভেনশনে যোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার এবং জাপানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সংগঠন। এছাড়া, নেপাল, চীন ও ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশ থেকেও প্রতিনিধিরা এ কনভেনশনে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কনভেনশনের প্রস্তুতি পর্বে এরই মধ্যে আটটি বিভাগে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রাম বিষয়ে বিভাগীয় সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। উন্মুক্ত বিভাগীয় সেমিনারগুলো থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে কনভেনশনের মূল ধারণাপত্র। সাম্প্রদায়িকতা ও সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম জোরদার ও অর্থবহ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মীদের শক্তির ঐক্য আজ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে উদীচী। কেননা সংস্কৃতির দুর্দিন রাজনীতির দুর্দিনের চেয়েও ভয়াবহ। সংস্কৃতির বিনিময় এবং সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে উদীচী দক্ষিণ এশিয়ায় শিল্পীকর্মীদের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চায়। আর, সে লক্ষ্যেই আয়োজিত হচ্ছে “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”।
কামাল লোহানী আরো জানান, সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা এই দুইয়ের বিরুদ্ধেই একইসাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় নিয়ে আয়োজিত “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”-এর অংশ হিসেবে উন্মুক্ত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার জন্য এরই মধ্যে সকল চিত্রশিল্পীদের তাদের অঙ্কিত চিত্রকর্মের আলোকচিত্র প্রেরণের জন্য আহবান জানিয়েছে উদীচী। চিত্রকর্মটি যেকোন মাধ্যম ও মাপের হতে পারে। চিত্রকর্মের বিষয় “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব”। আগামী ১৫ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় (১৪/২, তোপখানা রোড- জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে) চিত্রকর্ম জমা দেয়া যাবে। চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে সেরা চিত্রকর্ম অঙ্কনকারীকে উদীচীর পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশীয় সম্মাননা দেয়া হবে। বাংলাদেশের শিল্পীরা ছাড়া কনভেনশনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশের চিত্রশিল্পীরাও এ প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন।
দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন ছাড়াও আগামী মার্চে উদীচী আয়োজন করতে যাচ্ছে “সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা”। উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও এ উৎসব আয়োজন করছে উদীচী। গণসঙ্গীতের প্রচার ও প্রসার এবং একে একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিত এ উৎসবের এবার সপ্তম আয়োজন।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালনা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। এতে উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উদীচী বিশ্বাস করে একটি দেশের প্রগতির পথে অগ্রযাত্রায় সমাজ পরিবর্তনে দায়বদ্ধ শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সকল সচেতন মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস অপরিহার্য।