উদীচী’র ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জামসেদ আনোয়ার তপন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদকে সভাপতি এবং জামসেদ আনেয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২০তম জাতীয় সম্মেলন। গত ২৪ ডিসেম্বর শনিবার সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিন ৯১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি নির্বাচন করা হয়। উদীচী’র নতুন কেন্দ্রীয় সংসদে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন মামুনুর রশিদ। আর সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- অমিত রঞ্জন দে, সঙ্গীতা ইমাম এবং ইকবালুল হক খান।
২৪ ডিসেম্বর শনিবার সকালে দু’টি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হয় সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিনের সাংগঠনিক অধিবেশন। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম এবং সাংগঠনিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের প্রচার বিষয়ক সম্পাদক কংকন নাগ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত উদীচী’র প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকদের আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে এসব প্রস্তাব গৃহীত হয়।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হয় সম্মেলনের নির্বাচনী অধিবেশন। এ পর্বে বিষয় নির্বাচনী কমিটির পক্ষ থেকে পরবর্তী দু’বছরের জন্য নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয়। বিষয় নির্বাচনী কমিটির আহবায়ক ডা. চন্দন দাশের পক্ষে এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। বিষয় নির্বাচনী কমিটি প্রস্তাবিত নতুন কমিটির বিষয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে ৯১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচন করা হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন ড. সফিউদ্দিন আহমদ, আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জামসেদ আনেয়ার তপন। নতুন কমিটিতে ছয়জন সদস্যের নাম পরবর্তীতে কো-অপ্ট করার জন্য শুন্য রাখা হয়েছে। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া জাতীয় পরিষদের নামও ঘোষণা করা হয়। এরপর নতুন কমিটির শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উদীচী’র ২০তম জাতীয় সম্মেলনের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এরপর সন্ধ্যায় শুরু হয় তৃতীয় ও শেষ দিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এদিন সঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য ও নাটক পরিবেশনা করেন বিভিন্ন জেলা ও শাখা থেকে আগত উদীচী’র শিল্পী-কর্মীরা।
“জনতার ঐক্য দানবের দম্ভ ভাঙবেই”- এ শ্লোগান নিয়ে ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শহীদ বেদীতে বীর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর বর্তমান বাংলাদেশের নানা প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে উদীচী’র কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শংকর সাওজালের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় অসাধারণ উদ্বোধনী পরিবেশনা তুলে ধরেন উদীচী’র শিল্পী-কর্মীরা। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হাজারো দর্শক মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন উদীচী’র পরিবেশনা। উদ্বোধনী পরিবেশনা শেষে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক এবং ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার ডা. সাঈদ হায়দার। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলী গোলাম আরিফ টিপু। উদ্বোধনী পর্ব শেষে একটি বর্ণাঢ্য ও প্রাণবন্ত শোভাযাত্রা নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সারাদেশ থেকে আগত উদীচী’র কয়েক হাজার শিল্পী-কর্মীর অংশগ্রহণে শোভাযাত্রায় তিনটি বিষয়ের উপর প্রাধান্য দিয়ে সাজসজ্জা করা হয়। সুন্দরবনের কাছেই রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ও অন্যান্য অমুসলিম সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জসহ পাহাড়ে ও সমতলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে নানা ব্যানার, ফেস্টুন, প্রতিকৃতি ও সৃজনশীল বিভিন্ন বিষয় প্রদর্শন করা হয় শোভাযাত্রায়।
এছাড়া, সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার শোক প্রস্তাব উত্থাপন, সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন এবং অর্থ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে দু’টি প্রতিবেদনই সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।