স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিকদের উদীচীর সম্মাননা প্রদান
বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন করা হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত “ষষ্ঠ সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা-২০১৫”। গত ২৭ মার্চ বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত সাধক ও শিল্পী স্বপন কুমার হালদার। এবারের উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ও তাঁর মেয়ে শবনম সুরিতা ডানা। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যেসব কণ্ঠসৈনিক তাদের মেধা, শ্রম, সৃজনশীলতা ও প্রতিভার মাধ্যমে অসংখ্য কালজয়ী গান, কবিতা ও নাটকের সাহায্যে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুব্ধ করেছিলেন, সেই কণ্ঠসৈনিকদের উদীচীর পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হয়। উদীচীর ডাকে এদিন যেসব কণ্ঠসৈনিক উৎসবে উপস্থিত হন তাদের মধ্যে ছিলেন উদীচীর সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম, আশফাকুর রহমান খান, তিমির নন্দী, জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, মনোয়ার হোসেন খান, নমিতা ঘোষ, গোলাম রাব্বানী, কাজী তামান্না, ফকির আলমগীর, রুপা ফরহাদ, মালা খুররম, তরুণ মহলানবীশ, বুলবুল মহলানবীশ, মঞ্জুশ্রী দাশগুপ্তা, মোতাহার হোসেন, কামালউদ্দিন আহমেদ, শরফুজ্জামান, আবু নওশের, শফিউর রহমান দুলু, শিপ্রা ভদ্র, মুক্তি মহলানবীশ, শিল্পী মহলানবীশ, মঞ্জুলা দাশগুপ্তা প্রমূখ।
উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কালজয়ী গণসঙ্গীত রচয়িতা, সুরকার ও শিল্পীদের গান নিয়ে রচিত গ্রন্থনা পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এ পর্বটি মোহিত হয়ে উপভোগ করেন উৎসবস্থলে উপস্থিত হাজারো দর্শক। উদ্বোধনের পর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা সভা। এতে অংশ নেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিকরা। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ষষ্ঠ সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শংকর সাওজাল। বক্তব্য রাখেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। এরপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন চূড়ান্ত গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিল্পীরা। এছাড়াও ছিল, দেশের প্রতিষ্ঠিত গণসঙ্গীত শিল্পী ও দলের পরিবেশনা।
আলোচনা সভার পর জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ের বিজয়ীদের হাতে সনদপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। ২৭ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’Ñ এই তিনটি একক এবং একটি দলীয়সহ মোট চারটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে শিল্পীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সারাদেশে জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শেষে বিভাগীয় পর্যায়ে যারা প্রতিটি বিভাগের প্রথম তিনটি স্থানাধিকার করেছেন, তারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। এবারের প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে প্রথম হয়েছেন রুবাইয়াত ইউসুফ অর্ণি, দ্বিতীয় হয়েছেন মোহাম্মদ আবু তাহের এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন মোহাম্মদ আলীমুল মাহাদী। ‘খ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন অয়ন চৌধুরী, দ্বিতীয় নুসরাত জাহান রিফতা এবং তৃতীয় হয়েছেন রক্তিম রায়। ‘গ’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন জুটন চন্দ্র মজুমদার, দ্বিতীয় রাসু সরকার এবং মনিষা ঘোষ। এছাড়া দলীয় অর্থাৎ ‘ঘ’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে উদীচী যশোর জেলা সংসদ, দ্বিতীয় হয়েছে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে উদীচী বগুড়া জেলা সংসদ। প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার সেলিম রেজা, বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী ও উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী সোহানা আহমেদ। এছাড়া, বিচারকদের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গীত বিষয়ক সম্পাদক সুরাইয়া পারভীন।
আগামীকাল ২৮ মার্চ বিকাল ৫টা থেকে শুরু হবে গণসঙ্গীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানমালা। এদিন শুরুতেই জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী প্রতিযোগীদের হাতে সনদপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হবে। আগামীকাল সন্ধ্যায় থাকবে দেশের প্রতিষ্ঠিত গণসঙ্গীত শিল্পী ও দলের পরিবেশনা। গণসঙ্গীত পরিবেশন করবেন চূড়ান্ত গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিল্পীরা। এছাড়া, আগামী ৩০ মার্চ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত হবে শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, তাঁর মেয়ে শবনম সুরিতা ডানা এবং এবারের উৎসবের উদ্বোধক ও বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত শিল্পী স্বপন কুমার হালদারের যৌথ সঙ্গীতানুষ্ঠান।
দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গণসঙ্গীতকে ছড়িয়ে দেয়া এবং গণসঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে উদীচী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সত্যেন সেনের জন্মদিবস উপলক্ষে ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর “সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা” আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এবছর ষষ্ঠবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে এ উৎসব ও প্রতিযোগিতা।