বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীকে সভাপতি এবং প্রবীর সরদারকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৯১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। গত ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত উদীচীর দু’দিনব্যাপী ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলনে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদের জন্য এই নতুন কমিটি গঠিত হয়। নতুন কমিটিতে সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জামসেদ আনোয়ার তপন, অমিত রঞ্জন দে এবং সঙ্গীত ইমাম। আর, কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন বিমল মজুমদার। উল্লেখ্য, কামাল লোহানী এবং প্রবীর সরদার তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।
“নিত্য বাজুক বজ্রবীণা, মানুষ জাগুক জয়ে”- এই শ্লোগান নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন হওয়া উদীচীর ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন ছিল ২৭ ডিসেম্বর শনিবার। এদিন সকাল ১০টায় শুরু হয় সম্মেলনের সাংগঠনিক পর্ব, কাউন্সিল অধিবেশন। শুধুমাত্র প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত এ অধিবেশনে গত দুই বছরে উদীচীর কর্মকাণ্ডের খতিয়ান সম্বলিত সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনের উপর আলোচনা ও তা গৃহীত হওয়ার পর মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হয় সম্মেলনের নির্বাচনী অধিবেশন। এ পর্বে নানা বিচার-বিশ্লেষণ ও আলোচনা শেষে ৯১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটির ৮৭ জন সদস্যের নাম সম্মেলনে নির্বাচিত করা হয়। আর, বাকি চারজন সদস্যের নাম পরবর্তীতে কো-অপ্ট করা হবে বলে সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নতুন কমিটি গঠনের পর তাদের শপথবাক্য পাঠ করান উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী। সাংগঠনিক অধিবেশন শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বে আবহমান বাংলার চিরায়ত লোক সংস্কৃতির নানা পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হন উদীচীর সিলেট বিভাগ, খুলনা বিভাগ এবং রংপুর বিভাগের শিল্পীরা। এছাড়াও, ছিল সোহানা আহমেদের একক সঙ্গীত ও শাহাদাৎ হোসেন নিপুর একক আবৃত্তি।
এর আগে, গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে “নিত্য বাজুক বজ্রবীণা, মানুষ জাগুক জয়ে”- এই শ্লোগান নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে উদ্বোধন করা হয় লড়াই, সংগ্রাম ও গণসাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক-বাহক সংগঠন উদীচীর ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলন। দ্বি-বার্ষিক এ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে অতিথিদের উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে বরণ করে নেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতিরা। এরপর শহীদ বেদীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীতের পর সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ২০০৫ সালে নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ে মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নৃশংস বোমা হামলায় নিহত উদীচীর নেতা খাজা হায়দার হোসেন ও সুদীপ্তা পাল শেলীর পরিবারের সদস্য এবং ওই ঘটনায় আহত সহযোদ্ধাদের পক্ষে তুষার কান্তি রায়। এসময় সুদীপ্তা পাল শেলীর মা অরুনা রানী পাল, খাজা হায়দার হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম এবং বোমা হামলায় আহত মাসুদুর রহমান খান, সুসহ বণিক মলু ও সুব্রত রায় টিটু উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন ঘোষণার সাথেসাথেই একদল চৌকষ ঢাকীর ঢাক বাদন ও তার সাথে নৃত্যের তালে তালে উল্লাসে মাতোয়ারা হন শহীদ মিনার চত্বরে উপস্থিত বিভিন্ন জেলা ও শাখা থেকে আগত উদীচীর প্রায় দু’হাজার শিল্পী-কর্মী। ঢাক বাদন ও নৃত্যের পর শুরু হয় উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের পরিবেশনায় গীতি আলেখ্য- “মানুষ জাগুক জয়ে”। এটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহীদ মিনার থেকে বেরিয়ে দোয়েল চত্বর, টিএসসি মোড় প্রদক্ষিণ শেষে পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে শুরু হয় উদ্বোধনী আলোচনা সভা। উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে এ পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। এতে অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সাহিত্যিক জাকির তালুকদার, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও শ্লোগানকন্যা লাকি আক্তার। আলোচনা সভার মধ্যেই সম্মাননা দেয়া হয় শ্রমিক আন্দোলনের প্রবাদ প্রতিম পুরুষ জসিম উদ্দিন মণ্ডলকে। উদীচীর পক্ষ থেকে জসিম উদ্দিন মণ্ডলের হাতে তাম্রলিপি তুলে দেন উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী। আর, তাঁকে উত্তরীয় পড়িয়ে দেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। সম্মাননা গ্রহণ করে জসিম উদ্দিন মণ্ডল বলেন, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা ধনী-গরীবের বৈষম্যকে দূর না করে বরং তা জিইয়ে রাখতে চায়, তাই এ সমাজ ভাঙতে হবে। এসময় তিনি গান, নাচ, নাটকের মাধ্যমে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য উদীচীর প্রতি আহবান জানান।
অভিনন্দন………………… নতুন কমিটি