সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা এই দুইয়ের বিরুদ্ধেই একইসাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় নিয়ে আয়োজিত “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”-এর অংশ হিসেবে উন্মুক্ত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আগামী ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত হবে এ কনভেনশন। এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার জন্য সকল চিত্রশিল্পীদের তাদের অঙ্কিত চিত্রকর্মের আলোকচিত্র প্রেরণের জন্য আহবান জানিয়েছে উদীচী। চিত্রকর্মটি যেকোন মাধ্যম ও মাপের হতে পারে। চিত্রকর্মের বিষয় “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব”। আগামী ১৫ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় (১৪/২, তোপখানা রোড- জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে) চিত্রকর্ম জমা দেয়া যাবে। চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে সেরা চিত্রকর্ম অঙ্কনকারীকে উদীচীর পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশীয় সম্মাননা দেয়া হবে। বাংলাদেশের শিল্পীরা ছাড়া কনভেনশনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশের চিত্রশিল্পীরাও এ প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিষয়ক সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ (মোবাইল- ০১৭৫৫-৫০০৯৮৫)-এর সাথে যোগাযোগ করা যাবে।
আগামী ১৯ ফেব্র“য়ারি বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে উদ্বোধন করা হবে উদীচী আয়োজিত তিন দিনব্যাপী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশনের। তিন প্রবীণ বিপ্লবী কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল, কামাক্ষ্যা রায়চোধুরী এবং অধ্যাপক যতীন সরকার কনভেনশনের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর তিনদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ধরণ ও নানা অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠনকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। সারাদেশে উদীচীর তিন শতাধিক শাখা সংগঠন থেকে আগত প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেবেন। এছাড়া থাকবে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের পরিবেশনা। তিনদিন ধরে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা “ঢাকা ঘোষণা”। এরই মধ্যে এ কনভেনশনে যোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার এবং জাপানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সংগঠন। এছাড়া, নেপাল, চীন ও ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশ থেকেও প্রতিনিধিরা এ কনভেনশনে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কনভেনশনের প্রস্তুতি পর্বে এরই মধ্যে আটটি বিভাগে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রাম বিষয়ে বিভাগীয় সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। উন্মুক্ত বিভাগীয় সেমিনারগুলো থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে কনভেনশনের মূল ধারণাপত্র।
উদীচী মনে করে সাম্প্রদায়িকতা ও সা¤্রাজ্যবাদ উভয়ই বিশ্ব মানবতার শত্র“। বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই সাম্প্রদায়িকতার বীভৎস রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব কখনোই মৌলিক দ্বন্দ্ব নয়, শ্রেণি দ্বন্দ্বই সমাজের মৌলিক দ্বন্দ্ব। আর সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব, ভাষাগত, জাতিগত, আঞ্চলিক ইত্যাদি দ্বন্দ্ব হলো অবৈরি দ্বন্দ্ব। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেশীয় শাসকেরা এবং ঔপনিবেশিক তথা সাম্রাজ্যবাদীরা এগুলোকে বৈরি দ্বন্দ্বে পরিণত করে মানুষের বিকাশের ক্ষেত্রে বাধার প্রাচীর তৈরি করেছে। সাম্প্রদায়িকতা ও সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম জোরদার ও অর্থবহ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মীদের শক্তির ঐক্য আজ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে উদীচী। কেননা সংস্কৃতির দুর্দিন রাজনীতির দুর্দিনের চেয়েও ভয়াবহ। সংস্কৃতির বিনিময় এবং সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে উদীচী দক্ষিণ এশিয়ায় শিল্পীকর্মীদের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চায়। আর, সে লক্ষ্যেই আয়োজিত হচ্ছে “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”।