কথা : প্রবীর সরদার
সুর : ফারুক ফয়সাল
গোধূলীর সাথে সন্ধ্যা যে যায়
আবার সন্ধ্যা আসে
তপন রতন ভেসে ভেসে ওঠে
বেদনার প্রতিভাসে।।

কান্না হয়ে থামতে না চায়
সৈয়দ বুলু নীরবে তাকায়
মুখের হাসিটি কেড়ে নিয়ে হায়
শত্রুরা আজও হাসে।।

প্রতিবাদী সূর্য্যটা আলোক ছড়ায়
রামকৃষ্ণের চোখে রক্ত গড়ায়
শাহ্ আলমেরা ঘুমিয়ে রয়েছে
তোমার আমার পাশে

চিৎকার করে ইলিয়াস ডাকে
নূর ইসলাম মরে পড়ে থাকে
বাবলু রায়ের বুক ভেসে যায়
নিষ্ঠুর পরিহাসে।।

নির্বাচন, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নৌকার জয় :যতীন সরকার

‘দশ নম্বর বিপদ সংকেত’ জানিয়ে দিয়েছিলেনে প্রবীণ রাজনৈতিক আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, এ বছরের জানুয়ারির ৫ তারিখে জাতীয় সংসদের দশম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। মূলত নির্বাচনে বিজয়ী দলটির উদ্দেশেই ছিল তাঁর সতর্কবার্তা- ‘নির্বাচন তরীটি কোনোমতে ঠেলেঠুলে তীরে নিয়ে আসতে পারায় আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট ও তার নেত্রী শেখ হাসিনা যেন না ভাবেন, তাঁরা বিপদ ও সংকটমুক্ত হয়েছেন। সামনে আরো বড় বিপদ ও বড় লড়াই অপেক্ষা করছে।’ (‘কালের কণ্ঠ’ ৭ জানুয়ারি, ২০১৪)

লণ্ডন থেকে গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর লেখাটি পাঠিয়েছিলেন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরদিনই। সেই দিন থেকেই ‘বাংলাদেশে আরো বড় বিপদ’-এর সূচনা ঘটে গেছে। সেই দিনই ‘সংখ্যালঘুদের দুই শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর, আগুন, লুট। তিন স্থানে হামলায় আহত নারীসহ ৪০’ এবং সেই দিনেরই প্রতিবেদন- ‘৪৫ মিনিটে গুঁড়ো হয়ে গেছে শত বছরের বিশ্বাস’। যশোরের অভয়নগর যেন হয়ে ওঠে হিন্দুদের ওপর হামলাকারীদের ‘অভয়াশ্রম’। এ রকমই অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে দিনাজপুরের সদর উপজেলা, সীতাকুণ্ড, বগুড়া, মাগুরা, সাতক্ষীরা ও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ। Continue reading নির্বাচন, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নৌকার জয় :যতীন সরকার

বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটি

বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটি

সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাতিল এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে গতিশীল করার দাবিতে বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটির কর্মসূচি

বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটি গত ১৭ জুন ২০১১ গঠন এবং ২০ জুন ২০১১ তার আত্মপ্রকাশের পর থেকে ১৯৭২ সনের মূল সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ধারাবাহিকভাবে তৎপরতা চালিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সাম্প্রদায়িক ধারা বহাল রাখা, অগণতান্ত্রিক ধারা সংযোজন এবং আদিবাসীদেরকে বাঙ্গালী হিসেবে চিহ্নিত করার বিরুদ্ধে সংসদের ভেতরে ও বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ প্রগতিশীল শক্তির প্রবল আপত্তি ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও সরকারী দল কোন কর্ণপাত করেনি। অবৈধ সামরিক শাসক জিয়া-এরশাদের সাম্প্রদায়িক ক্ষতকে রেখে দিয়ে এবং আরো নতুন অগণতান্ত্রিক ও জাতিবৈষম্যের ধারা যোগ করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী যুক্ত হল। তাই ৩০ জুন জাতির ইতিহাসে একটি কলংকময় কালো দিবস। আমরা ঐ দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী রাজনৈতিক দলসমূহের সমাবেশ ও মিছিলে যোগদান করি এবং ৯ জুলাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল বের করি। সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাতিল এবং আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটি গত ৫ আগস্ট ২০১১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে সকল সদস্য সংগঠনের সঙ্গে মত বিনিময় সভা করা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ শাহ্বাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। গত ১৫ অক্টোবর ২০১১ কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে গন সমাবেশ, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া ২০ জুন, ৮ জুলাই ও ২৩ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিসমূহের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সরকারী দলের এক নেতা বলেছেন যে, তারাও পঞ্চদশ সংশোধনীতে সন্তুষ্ট নন, এবং ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তারা ১৯৭২ সনের সংবিধানের মূলনীতি পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। আমরা যদি এ বক্তব্যকে ’ছেলে ভোলানো’ হিসেবে না নিয়ে গুরুত্ব সহকারে নেই, তাহলে আমাদের প্রশ্নঃ যে যুক্তিতে তারা ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম, ’বিসমিল্লাহ—’ ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক অধিকার রেখে দিলেন – সে যুক্তির কি কোন পরিবর্তন হবে? ভোটের অপরাজনীতি কি তখন থাকবে না? সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশী আসন পেয়েও যদি আপনারা সংবিধানে গণরায়ের প্রতিফলন ঘটাতে না পারেন তবে কোন শর্ত পূরণ হলে তা পারবেন তা স্পষ্ট করলে জাতি উপকৃত হত। আদিবাসীদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান আরো আশ্চর্যজনক। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী উত্থাপনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত মহাজোটের প্রধান শরীক দল আদিবাসীদের স্বতন্ত্র স্বত্ত্বার স্বীকৃতিসহ সকল দাবির সাথে একাত্ম ছিল। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে এ সরকারই সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। হঠাৎ করে সরকারের এ ধরণের ভোল পাল্টানোর কোন ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশী আসনের চাইতে, কোন্ বলতে-না-পারা শক্তি এমন মহা ক্ষমতাধর হয়ে উঠল, যার প্রভাবে সরকারের অসাম্প্রদায়িক ও আদিবাসীদের পক্ষের রাজনৈতিক অবস্থান বদলে গেল? আমরা সরকারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের জবাবে এটাই বলতে চাই যে, যদি আপনারা সন্তুষ্ট না হয়েই থাকেন তবে, বর্তমান সংসদের মেয়াদ থাকাকালেই সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাদ দিন, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিন।

আমরা জানি যে, আমাদের দাবির পক্ষে প্রবল জনমত তথা আন্দোলন গড়ে না তুললে সরকার দাবি মানবে না। এ লক্ষ্যে বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটি প্রয়াস অব্যাহত রাখবে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশব্যাপী সকল জেলা-উপজেলায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-শিল্পাঞ্চল-পেশাজীবীদের কর্মস্থলে শাখা গঠন করা হবে। ইতিমধ্যে চট্রগ্রাম, বরিশাল, দিনাজপুর ও খুলনায় কমিটি গঠিত হয়েছে। সারাদেশে সকল জেলায় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী ৯ জানুয়ারি ২০১২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১২ সালের ৯ মার্চ মাসে ঢাকা‘য় জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে পুর্ণঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশের জনগণকে আমরা এ সংগ্রামে একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানাচিছ। এ সংগ্রাম কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, এ সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতা। একে এগিয়ে নিতে হবে সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সফল হওয়া পর্যন্ত।
আমরা ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে জিয়া-এরশাদের পথ ধরে সাম্প্রদায়িকতা ও সা¤্রাজ্যবাদের সুচতুর চক্রান্ত জালে জড়াতে দেবো না। সরকারকে অবশ্যই এটা মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধই আমাদের মহান সংগ্রাম, সশস্ত্র লড়াই। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক আহ্বানেই দেশবাসী জাতি-ধর্ম, দলমত নির্বিশেষে একত্রিত হয়েছিলেন, লড়াই করে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে অর্জন করেছি।

বাংলার মানুষ অমিততেজ, লড়াকু; কারো কাছে মাথা নত করে না। আমরা যখনই একাট্টা হয়েছি, প্রতিপক্ষ পরাজয় মানতে বাধ্য হয়েছে। তাই আমাদের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে চলমান আন্দোলন বেগবান করার লক্ষে আপনারদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। জয় আমাদের সুনিশ্চিত।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে: যতীন সরকার

 ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কি নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত? অন্তত বাংলাদেশে?

এ প্রশ্নের উত্তরে আমি পুরোপুরি নির্দ্বিধায় ও নিঃসংকোচে বলব- ‘হ্যাঁ’। আবার পরক্ষণেই বলব- ‘না’। এই ‘না’টিও ‘হ্যাঁ-এর মতোই একই রকম দ্বিধাহীন চিত্তে নিঃসংকোচেই বলব। কেন এ রকম দুই বিপরীত কথা এক নিঃশ্বাসে বলি ও বলে ফেলতে পারি, তার ব্যাখ্যা প্রদানেও আমার কোনো দ্বিধা বা সংকোচ নেই।

ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্ররূপে পাকিস্তান নামক যে অপরাষ্ট্রটির অধীন হয়েছিলাম আমরা, তার হাত থেকে মুক্তি লাভের জন্যই আমাদের অপরিমেয় প্রাণমান ও ধন উৎসর্গ করতে হয়েছিল। এ রকম সংগ্রাম করতে গিয়েই ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা পরিপূর্ণ মোহমুক্ত হয়ে উঠেছিলাম। তাই আমাদের সংগ্রামটি পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম মাত্র ছিল না, সেটি ছিল জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সেটি যেমন ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ছিল, তেমনই ছিল ‘মুক্তির সংগ্রাম’। Continue reading ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে: যতীন সরকার

অধ্যাপক যতীন সরকারের সাক্ষাৎকার : মোজাফফর হোসেন

প্রবন্ধ ও গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০০৭ সনের বাংলা একাডেমী পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক যতীন সরকারের জন্ম নেত্রকোনা জেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে। লেখকের প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’। ২০০৫ সালে তাঁর ‘পাকিসত্মানের জন্মমৃত্যু-দর্শন’-এর জন্য তিনি ‘প্রথম আলো’ পুরষ্কার পান। চল্লিশ বছরেরও অধিক কাল অধ্যাপনার সাথে যুক্ত থাকার পর বর্তামানে তিনি নেত্রকোনায় অবসর জীবন-যাপন করছেন।

মোজাফফর : স্যার, এই সময়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে কেমন বোধ করছেন ?

যতীন সরকার : খুব যে ভালো বোধ করছি তা না, কিন্তু আমি তো এরকমই…। Continue reading অধ্যাপক যতীন সরকারের সাক্ষাৎকার : মোজাফফর হোসেন