২৬-২৭ ডিসেম্বর উদীচী’র ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলন

আগামী ২৬-২৭ ডিসেম্বর উদীচী’র ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলন
চলছে জেলা পর্যায়ের সম্মেলন

“নিত্য বাজুক বজ্রবীণা, মানুষ জাগুক জয়ে”- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লড়াই, সংগ্রাম ও গণসাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক-বাহক বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলন। চলমান নানামাত্রিক সামাজিক সমস্যা-সঙ্কট, অসামঞ্জস্যতা, অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং নিরন্তর লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে জয়লাভ করার প্রত্যয়ে এ শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে। সভ্যতার নিয়ন্তা, ইতিহাসের স্রষ্টা সংগ্রামী জনগণের জীবনের অভিব্যক্তি প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে অবিরাম ছুটে চলা সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলন সফল করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান উদীচীর নেতৃত্ব।

আগামী ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ২০০৫ সালে নেত্রকোনায় মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নৃশংস বোমা হামলায় নিহত উদীচী নেতা খাজা হায়দার হোসেন এবং সুদীপ্তা পাল শেলীর পরিবারের সদস্য এবং ওই ঘটনায় আহত সহযোদ্ধারা। এরপর কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলনের আলোচনা ও সাংগঠনিক অধিবেশনসমূহ। এছাড়া, দুইদিনই সন্ধ্যায় থাকবে গান, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও অন্যান্য পরিবেশনা।

উদীচীর ঊনবিংশ জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। চলছে দেশে ও বিদেশে বিস্তৃত উদীচীর তিন শতাধিক শাখা ও সংসদের সম্মেলন। শাখাসমূহের সম্মেলন সম্পন্ন করে ইতিমধ্যে জেলা সংসদসমূহের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উদীচীর ৭১টি সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশেরই সম্মেলন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সারাদেশ ও দেশের বাইরে বিস্তৃত উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে নতুন করে শপথ গ্রহণ করছে। প্রতিটি সম্মেলনেই উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকছেন।

১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর শিল্পী-সংগ্রামী সত্যেন সেন-এর নেতৃত্বে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। জন্মলগ্ন থেকেই উদীচী গণসংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে কাজ করে আসছে। কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার, জনগণের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থানের অধিকার, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরোধিতা, জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের চক্রান্ত রুখে দিতে উদীচী’র শিল্পীরা প্রতিবাদী হয়েছে গণসঙ্গীত, নাটক, আবৃত্তিসহ গণসংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমে। উজ্জীবিত করেছে সাধারণ মানুষকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর থেকেই যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে উদীচী। যখনই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে, ষড়যন্ত্রের কালো মেঘ উঁকি দিয়েছে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে, তখনই গর্জে উঠেছে উদীচী। যত বাধা বিঘœই আসুক না কেন, সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে উদীচীর সংগ্রাম চলবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *