হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি নিয়ে উদীচী পালন করলো যশোর হত্যাকাণ্ড দিবস

Jessore Killing Dayস্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম ও নৃশংসতম যশোর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পুনঃতদন্ত এবং এর সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি নিয়ে উদীচী পালন করলো হত্যাকাণ্ডের ১৫তম বার্ষিকী। যশোর হত্যাকাণ্ডের দেড় দশক পূর্তিতে একইসাথে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছে উদীচী। যশোরের ঘটনায় নিহত শহীদদের স্মরণে গত ০৬ মার্চ, বিকাল সাড়ে চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে উদীচী আয়োজন করে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী’র শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন “মুক্তির মন্দির সোপাণ তলে”, “কী যে আজগুবি কারবার, ওদের চিনতে হয় বারবার”, “হুঁশিয়ার, ও সাথী কিষাণ মজদুর ভাইসব”, “লাখো লাখো হাত ভেঙেছে আজকে ভীরুতা ক্ষীণ” প্রভৃতি গান।

এরপর অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা মহানগর সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গণসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উদীচী’ সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, মাহমুদ সেলিম, উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, উদীচী’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, অমিত রঞ্জন দে, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঙ্গীতা ইমাম, ইকবালুল হক খান প্রমূখ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আর, তাই উদীচীর উপরই নেমে এসেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বোমা হামলা। শুধু উদীচী নয়, এর পরবর্তীতে একে একে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপসনালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড চালায় মৌলবাদী অপশক্তি। বক্তারা আরো বলেন, যশোর হত্যাকাণ্ডের পর সরকার কয়েকটি উগ্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা ও আইনের আওতায় আনলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে এসব সংগঠনের গডফাদার জামায়াত-শিবির গোষ্ঠী। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে তাদেরকে বহাল তবিয়তে রেখে নির্বিঘেœ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অধিকার দেয়ায় বারবারই মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশের সাধারণ মানুষের উপর। তাই, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

আলোচনা সভার পর সন্ধ্যায় শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আলোক প্রজ্বলন করা হয়। এরপর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে দলীয় ও একক সঙ্গীত এবং আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনা করেন উদীচী’র শিল্পীরা। এছাড়াও, ছিল উদীচী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের পরিবেশনায় নাটক “পোড়া লাশের মিছিল”।

১৯৯৯ সালের ০৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠীর বর্বর বোমা হামলায় নিহত হন ১০ জন শিল্পী-কর্মী। আহত হন প্রায় দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সংস্কৃতিমনা সাধারণ মানুষ। মৌলবাদী অপশক্তির ঘৃণ্য হামলার শিকার এসব সংস্কৃতি কর্মী এখন পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে নিয়ে জীবন যাপন করছেন।