সুস্থ সংস্কৃতি নির্মাণে উদীচী: গোলাম মোহাম্মদ ইদু

মেহনতি মানুষের বন্ধু, কৃষকের ঘরের একান্ত সুহৃদ সাহিত্যিক সাংবাদিক, উদীচীর মানসপুত্র সত্যেন সেন-এর জন্মদিনটিকে সামনে রেখে খেটে খাওয়া মানুষের সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী তৃতীয়বারের মতো দেশব্যাপী সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব সমাপ্ত করতে যাচ্ছে আজ।
উৎসবে গণসঙ্গীতের একজন দিকপাল ভারতীয় গণনাট্যসংঘের উত্তরসূরী মৌসুমী ভৌমিক প্রধান অতিথি হয়ে আমাদের এই উৎসবে আগমন করছেন। আমরা তাকে স্বাগত জানাই।
দেশের দিকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষ বিভিন্ন আঙ্গিকের সঙ্গীত প্রতিযোগিতা দেখে থাকেন। সেগুলোর কোনো কোনোটি টাকায় মোড়ানো থাকে। প্রতিভার অন্বেষণের চাইতে টাকার খেলাই এর উপজীব্য হয়ে ওঠে। শিল্পী সৃষ্টির চাইতে টাকার বান্ডিল হয়ে ওঠেন একেকজন।
উদীচীর পথ ভিন্ন। উদীচীর ৬৮টি জেলার প্রতিটি জেলার উদ্যোগেই গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে; তবে সেখানে শিল্পকেই প্রাধান্য দেয়া হয়, শিল্পীকেই সম্মানিত করা হয়।
আমাদের দেশে বিভিন্ন সঙ্গীত ধারায় এক শতাব্দীব্যাপী একটি সঙ্গীতধারা চলে আসছে, যেটিকে আমরা সহজ ভাষায় গণসঙ্গীত বলে থাকি। গানটি শুনলেই আমরা বুঝতে পারি এ হচ্ছে গণসঙ্গীত। তথাপি গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা শুরু করতে গিয়ে গণসঙ্গীতের সংজ্ঞা নিয়ে আমরা একটু দ্বিধায় পড়ি। এক কথায় বলে দিতে পারি না কোনটি গণসঙ্গীত। এ জন্য আমরা এর একটি পথ বার করেছি। যে পথের সাথে উদীচীর ‘আত্মার’ সংযোগ রয়েছে। মানদণ্ডটি হলো: প্রগতিশীল গণচেতনা সম্পন্ন গণজাগরণমূলক গান, শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতামূলক গান, সমাজের অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বর্ণনা এবং তার অবসানের দিকনির্দেশনামূলক গান, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, যুদ্ধবিরোধী ও শান্তির সপক্ষের গান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ গান, স্বৈরাচারবিরোধী গান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গান, নারী নির্যাতনবিরোধী গান ইত্যাদি। আমাদের নির্ধারিত মানদণ্ডে ৩য় বারের মতো অনুষ্ঠিত এই গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা তার লক্ষ্যের দিকে অনেকটা ধাবিত হচ্ছে বলে মনে হয়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, চারণকবি মুকুন্দ দাস এবং সত্যেন সেন- এদের গণমুখী গান নিয়ে এবং গণনাট্য সংঘের কিছু গণসঙ্গীত নিয়েই উদীচীর যাত্রা শুরু হয়েছিল গণসঙ্গীতের দিকে। এর কিছুটা আলামত আমি প্রত্যক্ষ করতে পারছি বলে মনে হয়। এবারকার গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার দুটি আসরে আমি উপস্থিত থাকতে পেরেছি একটি ঢাকা মহানগর এবং আরেকটি ঢাকা বিভাগীয় প্রতিযোগিতায়।
এবার ঢাকা বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় ২১জন প্রতিযোগী ছিল। তাদের পরিবেশিত ২১টি গণসঙ্গীতের মধ্যে ৮টি ছিল আমার না-জানা। সেই ৮টি সঙ্গীত স্থানীয় রচয়িতারা রচনা করেছেন বলে মনে হলো। এভাবেই হয়তো একদিন দেশে গণসঙ্গীত তার স্থান নির্ধারণ করে নেবে বলে আমি আশা প্রকাশ করতে পারি।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।