সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল গণসংগঠনসমূহের প্রতিবাদ সমাবেশ

DSC_1047গত বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা অব্যাহতভাবে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে, যারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে এবং মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করছে তাদেরকে বোমাবাজ ও জঙ্গী হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে রুখে দেয়ার আহবান জানিয়েছে প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ।অরাজক, অবরুদ্ধ ও সহিংস পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জীবন রক্ষা, জঙ্গীবাদ নির্মূল এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এ আহবান জানান। দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।

সমাবেশের শুরুতেই দলীয় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন “আমরা মানুষের জয়গান গাই গেয়ে যাই, আমরা জীবনের জয়গান গাই”, “ওরা বোমাবাজ, ওরা জঙ্গী”, “হুঁশিয়ার ও সাথী কিষাণ মজদুর ভাইসব হুঁশিয়ার” প্রভৃতি গান। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের ছোট্ট বন্ধু সুরম্য। তিনি দেশব্যাপী বোমাবাজির ফলে যেসব শিশু মারা যাচ্ছে ও আহত হচ্ছে তাদের প্রতি করা এ অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এরপর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক। তিনি আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিতের আহবান জানান।

এরপর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের নেতা আদনান রিয়াদ, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মোতালেব হোসেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ, প্রাইভেট কার ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হযরত আলী, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের কার্যকরি সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পিনু, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক এ এন রাশেদা, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান তারেক চৌধুরী সোহেল, কৃষিবিদ ইউনিয়নের নেতা অঞ্জন মজুমদার, ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট-এর নেতা ডা. রকিবুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বক্তব্য ছাড়াও, প্রতিবাদ সমাবেশে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন কাজী সামিউল আজিজ, বদরুল আহসান খান, তামান্না ডেইজি, উদীচীর সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন। সমাবেশে প্রতিবাদী পথচিত্র বা ট্রাফিক আর্ট করেন চিত্রশিল্পীরা। প্রতিবাদ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, অব্যাহত সহিংসতার কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন। ভেঙ্গে পড়েছে দেশের স্বাভাবিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এছাড়া, এসব অপরাধের সাথে জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পেলে অদূর ভবিষ্যতে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি মারাত্মকভাবে বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডকে অপরাজনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করে তারা অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। একইসাথে সহিংসতার পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার জন্য আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবানও জানানো হয়। সহিংসতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে ধারাবাহিক কর্মসূচি আয়োজন করার ঘোষণাও দেয়া হয় প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে। শাহবাগ চত্বর ছাড়া এই একই কর্মসূচি দেশের সব জেলা ও উপজেলা শহরে পালন করে আয়োজক প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর শাখা সংসদসমূহ।

প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজকদের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, প্রগতি লেখক সংঘ, কৃষিবিদ ইউনিয়ন, ডক্টরস ফর হেল্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড আর্কিটেক্ট ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বিপ্লবীদের কথা, প্রাইভেট কার ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, ট্রাক ড্রাইভার্স এসোসিয়েশন প্রভৃতি গণসংগঠন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *