সমাজতন্ত্র ও সংস্কৃতি: আন্তনিয়ো গ্রামসি তর্জমা: তাহমিদাল জামি

বিশ শতকের সবচেয়ে মৌলিক ও অন্তর্ভেদী চিন্তাবিদের নাম আন্তনিয়ো গ্রামসি। শুধু তাই নয়, মৌলিকতায় ও অন্তদৃষ্টিতে তাঁর স্থান কার্ল মার্কস, জিকমুন্ট ফ্রয়েড ও ভ¬াদিমির লেনিনের কাতারে। কি উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে কি সামাজ্যবাদের কবলগ্রস্ত অনুন্নত দেশে সংস্কৃতি, ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য ও সর্বহারা শ্রমিক কৃষকের সংগ্রামকে হৃদয়ঙ্গম করিতে গ্রামসি অপরিহার্য। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে গ্রামসি চর্চার বালাই নাই। গত বছর আহমদ ছফা বিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত গ্রামসি উৎসব চলাকালে মহাত্মার এই রচনাখানি তর্জমা করা হয়। গ্রামসির এই রচনা প্রথম প্রকাশিত হয়’I1Grido del Popolo পত্রিকায়, ১৯১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি তারিখে। তর্জমার জন্য ব্যবহৃত প্রবন্ধটির উৎস: The Gramsci Reader: Selected Writings ১৯১৬-১৯৩৫, David Forgass (New York: NY Press, 2000).

মূল প্রবন্ধ: সম্প্রতি এনরিকো লেওনের একখানি প্রবন্ধ আমাদের নজরে এসেছে। লেওন মশায় হামেশা যে অতি জটিল ও ঘোরাল কায়দায় লিখে থাকেন এই প্রবন্ধেও তিনি তেমন ভাষায় সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবিতার সাথে সর্বহারার সম্পর্ক নিয়ে কিছু চর্বিত চর্বণ করেছেন। অতঃপর এ দুইয়ের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছেন আমল ও ঐতিহাসিক সত্যকে; সে ঐতিহাসিক সত্য হল শ্রমিকশ্রেণি নিজ হাতে আপন ভবিষ্যৎ গড়ছে। আমাদের বিশ্বাস এই বিষয়ে আরেকবার আলাপ তোলাটা বৃথা হবে না। এর আগে ইল গ্রিদোতে এ আলাপ হয়েছে। আর যুব সঙ্ঘের ‘আভাঙ্গারদিয়া’ (অগ্রসৈনিক) পত্রিকায় নাপলির বোরদিগা আর আমাদের তাস্কার মধ্যে এ আলাপ নিয়েএরই মধ্যে গোঁড়া মতাদর্শিক কায়দায় বাহাস হয়ে গেছে।
দুইটা লেখার দুইটা অংশ স্মরণে আনি। প্রথমটা জনৈক জর্মন রমণীয় লেখকের নাম নোভালিস (জীবনকাল ১৭৭২ থেকে ১৮০১)। তিনি বলেছিলেন, ‘সংস্কৃতির আলোচনায় প্রধান প্রশ্নটা নিজের পরম আমি’র দখল নেওয়া নিয়ে, স্বয়ং নিজ হওয়া নিয়ে। তো পরকে পুরোপুরি বুঝতে বা উপলব্ধি করতে আমাদের যে ঘাটতি, তাতে আর আশ্চর্য কি! নিজেদেরই আমরা যদি পুরোপুরি বুঝে না উঠি তবে পরকে জানার আশা করা মিছা।’
দ্বিতীয় লেখাটি মহাত্মা জিয়াম্বাতিস্তা ভিকোর (১৬৬৮-১৭৪৪)। আমরা সারাংশ করব, ভিকো (তাঁর নববিজ্ঞান গ্রন্থের ‘আদি জাতিগুলির কাব্যিক চরিত্র ভাষা নিয়ে পয়লা অনুসিদ্ধান্তে’) সলনের প্রসিদ্ধ উক্তি ‘আত্মানং বিদ্ধি’র (যা পরে সক্রাতেস দর্শনের তরফে আপন করে নিয়েছিলেন) একটা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। ভিকো বলছেন এ কথার মধ্যে সলন নিচুজাতকে মৃদু ভর্ৎসনা করতে চেয়েছেন, নিচুজাতের লোকেরা ভাবত তারা পশুর জাত আর উঁচুজাতের লোকেরা দেবতার জাত। সলন বলছেন তারা যেন নিজেদের নিয়ে ভেবে দেখে, তাহলে তারা বুঝতে পারবে তাদের সাথে উঁচুজাতের রক্তে স্বভাবে কোন সহজাত ফারাক নেই, তখন তারা রাষ্ট্রীয় আইনেও উঁচুজাতের সমকক্ষতা দাবি করতে শিখবে। অতঃপর ভিকো সাব্যস্ত করছেন: নিচুঁ উঁচু জাতের মানুষে মানুষে সাম্যের এই জ্ঞানই প্রাচীন আমলের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রগুলোর ভিত্তি ও ঐতিহাসিক যুক্তি।
এই দুই টুকরা লেখা আমরা এলোপাতাড়ি বেছে নেইনি মোটেই। আমরা মনে করি এই দুই টুকরাতে লেখকদ্বয় ‘সংস্কৃতি’ ধারণাটা ঠিকঠাক বোঝার সূত্র ও সীমাগুলো ছুঁয়ে গেছেন – হোক তা অস্পষ্ট ও ঝাপসাভাবে। এমনকি সমাজতন্ত্রের সাপেক্ষে মিলিয়ে সংস্কৃতি ধারণাটা কিভাবে বোঝা যাবে সে সীমাসূত্রও এই দুই লেখা থেকে পাওয়া যেতে পারে।
সংস্কৃতি মানে যেন বিশ্বকোষের মত বিদ্যা, আর মানুষ যেন কতগুলো উপস্থিত অনুভূতি থেকে পাওয়া রাশিরাশি আলগা তথ্যের ভার যেগুলো অভিধানের মত সারি সারি আমাদের মগজে বোঝাই হয়ে আছে আর বাইরের দুনিয়ার নানা কা-ে এই মগজের মালিক ভেতরে বোঝাই করা তথ্যের ভিত্তিতে সাড়া দিচ্ছেন- এমনভাবে ভাবার অভ্যাস আমাদের ছাড়তে হবে। যে সংস্কৃতি এমন তা তো আদতেই ক্ষতিকর, বিশেষ করে সর্বহারার জন্য। এমন সংস্কৃতি একদল খাপ না খাওয়া মানুষ তৈরি করে, যারা নিজেদের হামবড়া মনে করে বাদবাকি আদমিদের তুলনায়। তাদের এই বড়াইয়ের কারণ তারা একরাশ তথ্য মুখস্ত করেছে আর সুযোগ পেলেই সেগুলো উগরে দিতে তারা কার্পণ্য করে না। এভাবে পরের সাথে মেলার বেলায় তারা নিজেরাই নিজেদের বেড়া হয়েওঠে। এই সংস্কৃতি একরকম নীরক্ত ফ্যাকাসে বুদ্ধি ব্যবসায়ী তৈরি করে যাদের রোমা রোলাঁ তীব্র কষাঘাত করেছেন। যক্ষ্মা কি সিফিলিস দেহের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের হানি যত করে, এই সংস্কৃতির পয়দা করা উদ্ধত বাকোয়াজ বুদ্ধিজীবীর দল সমাজ জীবনের ক্ষতি করে তার ঢের। যে তরুণ ছাত্র খানিক লাতিন, কিঞ্চিৎ ইতিহাস শিখেছে, যে তরুণ উকিল তার মাননীয় অধ্যাপকদের কুঁড়েমি আর গাছাড়ামির ভেতর থেকে ডিগ্রি নামক এক টুকরা কাগজ নিংড়ে নিয়ে সিদ্ধিলাভ করেছেÑতারা সবাই মোটের উপর নিজেদের আলাদা মনে করে, বড় মনে করে এমনকি সবচেয়ে দক্ষ শ্রমিকটার তুলনায়ও- যদিও ঐ শ্রমিকের কাজটা জীবনের জন্য অনেক বেশি অপরিহার্য, সমাজের জন্য শতগুণ বেশি মূল্যবান। কিন্তু তাদের এই সংস্কৃতি তো সংস্কৃতি নয়, এ তো প-িতি; এ বুদ্ধি নয়, বুদ্ধির ভড়ং। এর বিরোধিতা করা একান্ত ন্যায্য।
প্রকৃত সংস্কৃতি একদমই অন্যরকম এক ব্যাপার। সংস্কৃতি হল নিজের ভেতরের আত্মাকে সংগঠিত করা, তাতে শৃঙ্খলা আনা। সংস্কৃতি হল নিজের ব্যক্তিসত্তার সাথে বোঝাপড়া করা। সংস্কৃতি হল এক উচ্চতর চৈতন্য লাভ যা দিয়ে মানুষ নিজের ঐতিহাসিক মূল্য বুঝবে, জীবনে নিজের কাজটা চিনবে, নিজের অধিকার ও কর্তব্য শনাক্ত করতে পারবে। এর কোনটাই স্বতঃস্ফূর্ত বা আপনা আপনি হয়ে ওঠে না। এমন নয় যে নিজের ইচ্ছা হোক আর না হোক কতগুলো ক্রিয়া বিক্রিয়া আপনা আপনি ঘটে যাবে আর মানুষ সংস্কৃতি লাভ করে ফেলবে। পশু কিংবা গাছের জগতে এটা স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারে, তাদের প্রত্যেকের অঙ্গ বিকাশ অজ্ঞানে ঘটেÑ সেখানে সব নিয়তি নির্ধারিত, নিয়তিই আইন। আর সব কিছুর চেয়ে বড় কথা: মানুষ মানে মনের ঊষ। সে প্রকৃতির নয়, ইতিহাসের কারখানায় তৈরি মাল। যদি তাই না হবে, তাইলে বলুক দেখি কেউ, এই যে চিরকাল শোষক আর শোষিতের ভেদ রইল, সম্পদের ¯্রষ্টা আর ভোক্তা আলাদাই রইলÑএতকিছুর পরও সমাজতন্ত্র এল না কেন? মানুষের জাত যে ধাপে ধাপে একেক দফায় একটু একটু করে নিজের মূল্য চিনল, আর গত আমলের গুটিকয় শোষকের চাপিয়ে দেওয়া সমাজ গঠনের কানুনকে ছুঁড়ে ফেলার হক আদায় করে নিল, এ কি আপনা আপনি প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে, শারীরবৃত্তীয় দরকারে হয়েছে? না, এ ঘটেছে চিন্তাশক্তি খাটিয়ে ভেবে দেখার ফলে। বিদ্যমান ব্যবস্থা কেন চলছে, এই ব্যবস্থার টিকে থাকার শর্তগুলো কি আর ভেঙ্গে ফেলার সূত্রগুলোই বা কি, মানুষের দাসদশার যে উপস্থিত সত্য বা তথ্য, তাই থেকে কিভাবে বিদ্রোহ ও সমাজকে ভেঙ্গে গড়ার আহবান তৈয়ার হবে তা মানুষ ভেবে দেখেছে। প্রথমে কয়জন ভেবেছে শুধু, তারপর ভেবেছে গোটা একটা শ্রেণি। তার মানে প্রতিটা বিপ্ল¬বের পেছনে বিচার ও পর্যালোচনার এক কঠোর পরিশ্রমী পর্যায় থাকে, যখন সংস্কৃতি ও চিন্তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে যায়, জনগণ প্রথমে নতুন সংস্কৃতি নতুন চিন্তাকে নিতে পারে না, বাধা দেয়; তারা উপস্থিত আর্থিক রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর বেলায় শুধু নিজেরটাই সুরাহা করতে চায় খালি, একই দশায় থাকা অপরের সাথে কোন সংহতি বন্ধন রাখে না। এর সবশেষ নজির আমাদের একদম কাছের আর পরিচিতÑ ফরাশি বিপ্ল¬ব। ফরাশি বিপ্ল¬বের অব্যবহিত আগের সাংস্কৃতিক যুগটার নাম বাতিজ্বলার যুগ। তাত্ত্বিক চিন্তার আলগা সমালোচকেরা বাতিজ্বলার যুগ বলতে বোঝায় যেন এমন এক যুগ যখন গুটিকয় বিশ্বকোষ-জান্তা বুদ্ধিজীবী জগতের তাবৎ ব্যাপার স্যাপার নিয়ে একই সমাহিত ভাব নিয়ে আলাপ পেড়ে যাচ্ছিলেন, কাউকে তারা সমসাময়িক বলে তখনি মানতেন যদি সে দ’আলেম্বারতের ও দিদেরোর বিশ্বকোষ পড়ে থাকে। কিন্তু বাতিজ্বলার যুগের এই চিত্রায়ন মিথ্যা। এ যুগ কেবল শুকনা প-িতি আর বুদ্ধিজীবীতার যুগ ছিল না, যেমন প-িতি আমরা আজকালকের সবচেয়ে বাজে পপুলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিলক্ষণ দেখে থাকি। বাতিজ্বলার যুগ নিজেই ছিল এক মহৎ বিপ্লব: দ স্যাঙ্কতিস তার ‘ইতালীয় সাহিত্যের ইতিহাস’ বইয়ে এ খবর টুকে গেছেন। বাতিজ্বলার যুগ সমগ্র ইউরোপকে এক বুর্জোয়া রুহানি আন্তর্জাতিক এনে দিল, তা এল ইউরোপ সমাজব্যাপ্ত এক অখ- চৈতন্যের রূপে, সাধারণ মানুষের সকল দুঃখে দুর্ভাগ্যে যে চৈতন্যে সাড়া জাগে, যে চৈতন্য ছিল ফরাশি দেশের রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের সবসেরা প্রস্তুতি।
ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি — সর্বত্র একই বিষয়, একই প্রথা-প্রতিষ্ঠান, একই নীতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। একেকটা নতুন নাটক বেরুচ্ছে বলতেয়রের হাতে, একেকটা প্যাম্ফলেট ছাড়া হচ্ছে, আর ফুলকির মত ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে। আর তাদের মধ্যে আগে থেকেই যোগরেখা আঁকা হয়ে গেছে। যে দেশেই যাই এসব নাটক প্যাম্ফলেট চিন্তা সমর্থন দিচ্ছে একইরকম লোকে, বিরোধিতাও করছে অন্য একদল লোকে। নাপলেয়ঁর সৈনিক দল সঙ্গিন বা বেয়নেট উঁচিয়ে যখন ইউরোপের পথে বের হল, দেখা গেল সে পথ আগে থেকেই মসৃণ করে গেছে বই আর প্যাম্ফলেটের অদৃশ্য সৈনিকের দল, যারা পারি নগর থেকে আঠার শতকের গোড়া থেকেই ইউরোপের অভিমুখে ছড়িয়ে পড়েছিল রাশি রাশি, আর কি মানুষ কি তার প্রথা-প্রতিষ্ঠান সবকিছুকে ভেতর থেকে প্রস্তুত করে তুলেছিল নতুনের জন্য। পরে যখন ফ্রান্সের ঘটনাবলি অখ- এক চৈতন্য ঝালিয়ে তুলল, তারপর তো পারিতে একটা মিছিল নামলেই মিলান কি ভিয়েনা কি আর আর ছোট খাট হাটে শহরে তেমনি আন্দোলন লেগে যেত। যারা উপরি উপরি সবকিছু দেখে থাকেন, তারা মনে করবেন এসবই বুঝি স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা। কিন্তু যে সাংস্কৃতিক ব্যাপারগুলো দানা বাধায় এই মানসিক প্রস্তুতি সম্ভব হল তা যদি না বুঝি তবে কিভাবেই বা বুঝব কি করে এক দাবিতে শত বিস্ফোরণ পাকিয়ে উঠল।
সমাজতন্ত্রের বেলায় আজ ঠিক তাই ঘটছে। পুঁজির সভ্যতার বিচার করার মধ্য দিয়েই সর্বহারার ভেতর এক অখ- চৈতন্যের উদয় হয়েছে, গঠন হচ্ছে; আজও হচ্ছে। এই বিচার তো সংস্কৃতি বৈ হয় না; এমনকি স্বতঃস্ফূর্ত বা প্রাকৃতিক ধারায় হওয়ার নয়। নোভালিস সংস্কৃতির উদ্দেশ্য বলে যাকে সাব্যস্ত করেছিলেন, বিচার সেই আত্মজ্ঞানের নাম। আত্মার জ্ঞান, যে আত্ম পর নয়, পরের বিপরীত, যে ভেদজ্ঞানে জ্ঞানী। এই আত্ম যখন সংকল্প খাড়া করে, তখন সে জগতের ঘটনা বা ব্যাপারাদিকে আর আলগা বা নিজ নিয়মে চলছে বলে দেখে না, বরং সেসবের ভেতর দিয়েইতিহাস এগোচ্ছে না পেছাচ্ছে সেই হুঁশও সে রাখে টনটনে। নিজকে জানা মানে নিজ হয়েউঠা, নিজের মনিব নিজেই বনা, নিজেকে পরের থেকে ভেদ করা, পঞ্চভূতের সৃষ্টিছাড়া নৈরাজ্য থেকে মুক্তিলাভ করে শৃঙ্খলার পথে দাঁড়ানোÑ কিন্তু সে নিজেরই শৃঙ্খলা, নিজেরই নিয়ম, এক আদর্শের, আদলের সংগ্রামের জন্য সে শৃঙ্খলা। আর এই আত্মজ্ঞান তো হবে না যদি আমরা পরকে না জানি, পরের ইতিহাস, তারা কিভাবে একের পর এক হয়ে ওঠার সংগ্রাম করে গেছে, সভ্যতা গড়ার মেহনত করে গেছে, যে সভ্যতা আমরা আমাদের সভ্যতা দিয়ে খালাস করতে চাই। অন্যভাবে বলতে, মন যেসব নিয়মে বাঁধা সেগুলো জানতে হলে আমাদের প্রকৃতি ও তার নিয়মকানুনও কমবেশি জানা চাই। আর এসব জানতে হবে চূড়ান্ত লক্ষ্যটাকে সামনে রেখেই: পরের ভেতর দিয়ে নিজেকে জানা, আর নিজের ভেতর দিয়ে পরকে জানা।
সত্যই যদি নিখিল ইতিহাস এক সুতায় গাঁথা মালা হয়, যাতে জাতপাত-সংস্কার-পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে প্রতিটা লড়াই-সংগ্রাম একটা একটা করে ফুল হয়ে মিলেছে, তাহলে সর্বহারাও যে এক নতুন ফুল নিয়ে এসেছে গাঁথবে তাই, তাকেও কি জানতে হবে না তার আগে কে কেন কিভাবে কি করে গেছে, আর এসব থেকে সে কি শিক্ষা নিতে পারে।