রণেশ দাশগুপ্তের সংস্কৃতি চেতনা: অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী

প্রথমেই বলে দিতে চাই, রণেশ দাশগুপ্ত (১৯১২-১৯৯৭) কেবল একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। আর সেই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে অনেকগুলো কামরা। প্রতিটি কামরাই আপন আপন সম্পদে সমৃদ্ধ।
তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে অনেকেই তাঁকে ঋষি বলেছেন। ত্যাগ, সৎসাহস, ধৈর্য, প্রজ্ঞা আর সৃষ্টিশীলতা ঋষিদের বৈশিষ্ট্য। রণেশ দাশগুপ্তের চরিত্রে এ সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। তাই তিনি ঋষি। তাঁর আদর্শ-নিষ্ঠা, আদর্শ প্রকাশে তাঁর অনুচ্চ কিন্তু দৃঢ় উচ্চারণ তাঁর প্রতিপক্ষকেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধান্বিত করে তুলেছে।
আর এ-সকল এসেছে তাঁর জীবনদর্শন থেকে। সেই জীবনদর্শন থেকেই গড়ে উঠেছে তাঁর সংস্কৃতি চেতনা।
‘সংস্কৃতি চেতনা’ কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু তার পরিচয় প্রদান করা সহজ নয়। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা জাতির সংস্কৃতি চেতনার পরিচয় এক জায়গায় জড়ো করা থাকে না। ব্যক্তির ক্ষেত্রে পরিবার, জীবনে প্রভাব ফেলার মতো ব্যক্তিত্ব দেশ ও জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য, চারপাশের নৈসর্গিক ও সামাজিক পরিবেশ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও অবস্থা প্রভৃতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় একজন ব্যক্তির একক বা সামাজিক অবস্থান গ্রহণ ও আচরণের মধ্য দিয়ে চেনা যায় ব্যক্তির সংস্কৃতি চেতনা।
আরও একটি কথা : ব্যক্তির সংস্কৃতি চেতনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যক্তির মধ্যে গড়ে ওঠেনা। তা তাঁর একার বলে প্রতিভাত হলেও, তা মূলত সামাজিক। সমাজ-পরিবেশের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া তাঁর সাংস্কৃতিক চেতনাকে বিনির্মাণ করে। সেই বিনির্মিত সংস্কৃতি চেতনা আবার ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব রূপে, কারও কারও ক্ষেত্রে প্রতিভারূপে সমাজকে সমাজের অপরাপর সদস্যদের প্রভাবিত করে।
বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শুরুর দিক (১৯১২) থেকে শেষ দশকের প্রায় শেষাবস্থা (১৯৯৭) ছিল রণেশ দাশগুপ্তের জীবনকাল। এ সময়ের মধ্যে যখন থেকে তাঁর মধ্যে একটু একটু করে বিচারবুদ্ধি জাগ্রত হচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ করছেন, সচেতন সংবেদনশীলতা, তখন থেকে জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সময়সীমার সমাজ-পরিবেশ-জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, শিল্প-সাহিত্য, সংগ্রাম-প্রতিবাদের মধ্য থেকেই গড়ে উঠেছে তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর জীবনাদর্শ, তাঁর সংস্কৃতি চেতনা। রণেশ দাশগুপ্ত নিজেই বলেছেন, মানুষ বানায়, মানুষকে বানায় সংস্কৃতি। অর্থাৎ মানুষই সংস্কতির শ্রষ্টা- নির্মাতা, আবার সংস্কৃতিই মানুষকে স্রষ্টা বা নির্মাতা বানায়।
উল্লেখিত কালপর্বে অবিভক্ত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের পরিচয় পাওয়ার আগে তিনি বেশ একটা প্রশান্ত পরিবেশে তাঁর শৈশব কাটিয়েছেন পিতা অপূর্বরতœ দাশগুপ্তের চাকরি-সূত্রে বিহারে রাঁচিতে। চাকরির কারণে তাঁর পিতা পুনা চলে গেলে পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে শিশু রণেশকে কিছুদিন পুরুলিয়ায় থাকতে হয় অন্যতম জ্যাঠামশাই নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের আবাসে।
পুরুলিয়া রামপদ পণ্ডিতের পাঠশালায় ছাত্র হিসেবে কাটে তিন বছর। তারপর আবার তাঁরা রাচিতে ফিরে আসেন। রাঁচি ফিরে আসার পর বয়স দশ হয়ে গেলেও তিনি স্কুলে ভর্তি হননি।
তখনকার জীবন সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন:
“….. প্রথম তিন বছরে পাঠশালায় যা পড়েছিলাম তাই সম্বল করে কিছু বাংলা উপন্যাস পড়া শুরু করি। বাবা অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি চড়ায় বড়ায় ঘুরে বেড়াতাম। রাচির আশেপাশের বিভিন্ন পাহাড়ি নদীর উৎস সন্ধানের জন্য একটা ‘পাঠক্রমই তৈরি করে ফেললাম।…”
এ নৈসর্গিক পরিবেশে পড়াশুনার ভারম্ক্তু অবস্থায় ঘুরে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে তাঁর মধ্যে নিসর্গ প্রীতি ও উদারতার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। তারপর রাঁচি জেলা স্কুলে ভর্তি হন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁর মেধার বিকাশে এ সময়ে সহায়তা করেন, প্রথমে তার মা ইন্দুপ্রভা দাশগুপ্ত। তাঁর সাহিত্য প্রীতির দীক্ষাও মায়ের কাছে। তাঁর মা রবীন্দ্রনাথসহ অন্যান্য লেখকের লেখা পড়তেন। পঠিত উপন্যাসের গল্প বলতেন। রাঁচিতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ার কারণে এবং যতœশীল শিক্ষকদের সহায়তায় তিনি অন্যান্য ছাত্রদের মতোই ইংরেজি ভাষা ভাল করে রপ্ত করেছিলেন।
তারপর তাঁর জ্ঞাতি সম্পর্কে জ্যাঠতুত এক ভাই অশোকানন্দ দাশ তাঁকে বিশ্বসাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ‘ঝরা পালক’ পড়ার মধ্য দিয়ে জীবনানন্দ দাশের কাব্যের সঙ্গেও তাঁর পরিচয় ঘটে-তারও মাধ্যম ছিলেন আশোকানন্দ। এ সময়ে তিনি গানও গাইতেন।
তাঁর অন্যতম জ্যাঠামশাই নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। অসহযোগ আন্দেলনে যোগদান, কুটির শিল্পজাত দ্রব্য তৈরির শিল্পআশ্রম, শিক্ষা প্রচারে জন্য জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংগঠিত করার জন্য ‘লোকসেবক সঙ্ঘ’র প্রতিষ্ঠা, ছাপাখানা স্থাপন করে ‘মুক্তি’ নামে একটি সাপ্তহিকী প্রকাশ, সত্যাগ্রহে যোগদান প্রভৃতির মধ্য দিয়ে ঋষিতুল্য ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন ‘মানভূমের গান্ধী’। অভিহিত নিবারণ দাশগুপ্ত রণেশ দাশগুপ্তের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশে নিবারণ দাশ গুপ্তের প্রভাব থাকলেও রণেশ দাশগুপ্তের রাজনৈতিক ‘দীক্ষাগুরু’ ছিলেন বাংলার অগ্নিযুগের বিপ্লবী যুবা হরিপদ দে। এঁর সংস্পর্শে এসে রণেশ দাশগুপ্ত অনুশীলন সমিতি নামে স্বাধীনতার জন্য ‘সন্ত্রাসবাদী’ আন্দোলনের সংগঠনের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন। তারই ফল হিসেবে তিনি বাঁকুড়া কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। এভাবেই শুরু হয় রণেশ দাশগুপ্তের রাজনৈতিক জীবন।
এরই মধ্যে রুশ বিপ্লবের ঢেউ ভারতবর্ষ তথা বাংলা এসে লাগে। মানবেন্দ্র নাথ রায়, রজনীপাখ দত্ত প্রমুখের যোগাযোগের মাধ্যমে ভারতবর্ষ আন্তর্জাতিক মার্কসবাদী দুনিয়ার সঙ্গে য্ক্তু হয়।
আমরা জানি, বিশ শতকের তিরিশ-এর দশকে কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্রী-সাম্যবাদী চেতনার প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের অনেকেই মার্কসবাদী হয়ে ওঠেন। রণেশ দাশগুপ্ত তাঁদেরই একজন। তিনি রাঁচি থেকে কলকাতা হয়ে আসেন বরিশাল। তারপর ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসাবাস। জড়িত হন শ্রমিক আন্দোলনে; অন্যদিক থেকে পেশা হিসেবে নেন সাংবাদিকতা, শুরু করেন সাহিত্য চর্চা। গড়ে তোলেন প্রগতি লেখক সংঘের শাখা, যে সংঘের উদ্দেশ্যের মধ্যে ছিল ‘স্বদেশ ও নিজ অঞ্চলের জনগণের জীবনের সঙ্গে সাহিত্যের গভীর সংযোগ স্থাপনের তাগিদ’ এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মীদের সামাজিক দায়বন্ধতা। আর সেই দায়বন্ধতা থেকেই শ্রেণিহীন শোষণমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তোলার জন্য বস্তুবাদী দর্শনের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায় আস্থাশীলতা এবং তার মাধ্যমে শোষণমুক্ত প্রকৃত মানবতায় মণ্ডিত সমাজ প্রতিষ্ঠার নিরন্তর যৌক্তিক সংগ্রাম।
আর আশাবাদী এই নিরন্তর সংগ্রামী চেতনাই রণেশ দাশগুপ্তের সংস্কৃতি চেতনার মৌল উপাদান ও মূল নিয়ন্তা। শোষিত মানুষের অবস্থান থেকে সমাজ ও জীবনকে দেখা, শোষণের জিঞ্জির ভেঙ্গে সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এবং সেক্ষেত্রে বৃদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও শ্রমজীবীর মধ্যকার দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে মুক্তির অন্বষা ছিল রণেশ দাশগুপ্তের সংস্কৃতি চেতনাজাত অন্বিষ্ট।
রণেশ দাশগুপ্ত বিশ্বাস করতেন, রাজনীতি সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির প্রকাশ ঘটে রাজনৈতিক অবস্থান ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে। আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ও প্রত্যাশায়। তবে তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক প্রচারের প্রত্যক্ষ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিরোধী ছিলেন। শিল্পীর স্বাধীনাতায়ও তাঁর ছিল প্রগাঢ় আস্থা।
রণেশ দাশগুপ্তের সংস্কৃতি চেতনায় একদিকে ছিল বিদ্যমান শোষণমূলক সমাজের রূপান্তর ঘটিয়ে তাকে শোষণহীন করে তোলার প্রত্যয় ও প্রত্যাশার পরিপোষক সাহিত্য-শিল্পগত কর্মকাণ্ড পরিচালনা, অন্যদিকে বাঙালি ঐতিহ্যগত উত্তরাধিকার থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে ঐতিহ্য-সংলগ্ন থাকা।
সুতরাং যান্ত্রিকভাকে গ্রহণ-বর্জন নয়। এখানেও সেই দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া। তাই লোক সংস্কৃতির প্রতি রণেশ দাশগুপ্তের ছিল অপরিসীম শ্রদ্ধা, একই সঙ্গে শোষণমুক্ত শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী নবচেতনা সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পদযাত্রায় জোরকদমে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয়।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে শিশুদের গড়ে তোলার জন্য খেলাঘরের মধ্যমনি হয়ে ওঠা, অন্যদিকে শোষণমুক্ত শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা বুকে নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের উদীচীর পতাকা তলে সমবেত করা। প্রভৃতির মধ্যে রয়েছে তাঁর সেই দৃষ্টান্ত।
তাঁর নানা কাজের মধ্যে একটি বাড়তি কাজ ছিল তরুণদের উৎসাহিত করা। ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ হলেও, বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছি না : বর্তমান আলোচক বা নিবন্ধকারকে সাহিত্যের জগতে টেনে আনার জন্যে, সাহিত্য ও সংস্কৃতিমূলক কার্যক্রমকে সামাজিক দায়বন্ধতার দৃষ্টিতে দেখার জন্যে, অনাড়ম্বর জীবন যাপনের দৃষ্টান্ত হয়ে ত্যাগে ও সংগ্রামে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য সবচেয়ে উজ্জ্বল নামটি হলো রণেশ দাশগুপ্ত।
প্রগতিশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ডে এভাবে শিল্পী-কর্মী সৃষ্টি করাও ছিল তাঁর অন্যতম কাজ।
নিজের সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি সাহিত্য সংকলন প্রকাশে লেখা দিয়ে উৎসাহিত করা, রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী প্রভৃতি অনুষ্ঠানে অতিথি রূপে যোগদান করে সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে তত্ত্ব ও তথ্যগত কিন্তু সহজবোধ্য ও সরস আলোচনা এবং ব্যক্তিগতভাবে তরুণ ছাত্র-ছাত্রী, শিল্পী-সাহিত্যিকদের সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক নানা বিষয়ে উপদেশনা, তাদের চোখের সামনে সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও স্বপ্নকে ফুটিয়ে তোলাও তাঁর সংস্কৃতি চেতনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের অঙ্গ।
বিশ্বের প্রায় সকল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের সমাজতন্ত্র থেকে সরে পুঁজিবাদী ধারায় ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে সমাজতন্ত্রী তথা সাম্যবাদীদের মনে। অনেকেই সরে গেছেন সমাজতান্ত্রিক আদর্শ থেকে, হাঁটছেন পুঁজিতন্ত্রের পথেই। কিন্তু রণেশ দাশগুপ্ত আশাবাদী ছিলেন। তিনি সমাজতন্ত্রীদের জন্য আহবান জানিয়েছেন : সমাজতন্ত্রের সৈনিকেরা জাড্য ছাড়ো।
রণেশ দাশগুপ্তের সংস্কৃতি চেতনায় এই স্বরূপ প্রকৃত মানবতায় মণ্ডিত শ্রেণিহীন শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের জন্যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে জোরদার করার গুরুত্বকে আরও তীক্ষè করে তুলে ধরে। রণেশ দাশগুপ্তের সংস্কৃতি চেতানার আলো প্রজ্বলিত করেছে হাজার হাজার আলো- সেই আলোর মশাল হাতে নিয়ে অকুতোভয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। পথ চলতে চলতে হয়তো সন্ধান করে নিতে হতে পারে নতুন পথ। কিন্তু গন্তব্য একটাই। বার বার কারাবরণ করে ঋষিমূলক ত্যাগ ও তিতিক্ষায়, নিরন্তর আশাবাদী থেকে মানবমুক্তির জন্য চির সংগ্রামী রণেশ দাশগুপ্তের জীবন একটি দৃষ্টান্তমূলক প্রতিষ্ঠান। আর সে প্রতিষ্ঠানে রয়েছে কত বিচিত্র কামরা। কোথাও শ্রমিক আন্দোলন, কোথাও বুদ্ধিজীবী-সংস্কৃতিকর্মী ও শ্রমজীবীর মধ্যেকার দূরত্ব কমানোর প্রয়াস, কোথাও সাংবাদিকতা, মৌলিক সাহিত্য চর্চা, গবেষণা, আলোচনা কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা- তাঁর সাম্যবাদী জীবনদর্শন-প্রসূত সাংস্কৃতিক চেতনার আলোকে আলোকিত এক একটি কামরা, তাই না!