যশোর হত্যাকাণ্ডের ১৬তম বার্ষিকীতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ

আগামীকাল যশোর হত্যাকাণ্ডের ১৬তম বার্ষিকীতে উদীচীর প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। দৃশ্যায়িত হবে রক্তাক্ত উদীচীর প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্ষতচিহ্ন’

আগামীকাল ০৬ মার্চ যশোর হত্যাকাণ্ড দিবস-এর ১৬তম বার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের এই দিনে যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে গভীর রাতে যখন হাজারো জনতা ও সংস্কৃতিকর্মী বাংলার আবহমান সংস্কৃতির ধারক বাউল গানের সুর মূর্ছনায় বিমোহিত হয়েছিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে মঞ্চের নিচে আগে থেকে রেখে দেয়া বোমার। ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চালানো ওই নৃশংস হামলায় প্রাণ হারান নূর ইসলাম, সন্ধ্যা রানী, রামকৃষ্ণ, তপন, বাবুল সূত্রধরসহ অন্তত ১০ জন শিল্পী-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। আহত হন দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সংস্কৃতিমনা সাধারণ মানুষ। মৌলবাদী অপশক্তির ঘৃণ্য হামলার শিকার সেসব সংস্কৃতি কর্মী এখনও পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে নিয়ে জীবন যাপন করছেন।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আর, তাই উদীচীর উপরই নেমে আসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরণের সর্বপ্রথম হামলা। এর পরবর্তীতে একে একে চালানো হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপসনালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড।

যশোর হত্যাকাণ্ডের পর সরকার কয়েকটি উগ্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ও আইনের আওতায় আনলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে এসব সংগঠনের গডফাদার জামায়াত-শিবির গোষ্ঠী। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে তাদেরকে বহাল তবিয়তে রেখে নির্বিঘেœ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অধিকার দেয়ায় বারবারই মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশের সাধারণ মানুষের উপর। তাই, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি। যশোরে উদীচীর সম্মেলনে কাপুরুষোচিত হামলার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের অন্যান্য লাখো মামলার মতো এই মামলারও বিচার কাজ এখনও শেষ হয়নি। একটি লোক দেখানো বিচার করা হলেও তাতে প্রকৃত অপরাধীদের কেউই শাস্তির আওতায় আসেনি। পরবর্তীতে উদীচীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার পুনঃতদন্ত কাজ শুরু হলেও কোন এক অজানা কারণে সেটিও স্থবির হয়ে রয়েছে।

যশোর হত্যাকাণ্ডে ১৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে ওই ঘটনায় নিহত শহীদদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে আগামীকাল ০৬ মার্চ, বিকাল সাড়ে চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোক প্রজ্বলন কর্মসূচি আয়োজন করেছে উদীচী। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত থাকবেন যশোরে বোমা হামলার প্রত্যক্ষ শিকার, আহত সংস্কৃতি কর্মী সুকান্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সম্প্রতি মৌলবাদী গোষ্ঠীর বর্বর হামলায় নিহত বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়-এর বাবা অধ্যাপক অজয় রায়, যশোরে বোমা হামলাকালীন সময়ে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম, সেসময়কার সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, উদীচী’র সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। এছাড়াও, অস্থায়ী বেদীতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত থাকবেন।

আলোচনা সভা ছাড়াও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে দলীয় ও একক সঙ্গীত এবং আবৃত্তি পরিবেশনা। থাকবে উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের নতুন পথনাটক ‘বাবুর্চিখানা’। এছাড়াও, ১৯৯৯ সালে যশোর থেকে শুরু করে ২০০৫ সালের ০৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনা পর্যন্ত উদীচীর রক্তাক্ত ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল নিয়ে উদীচী কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগের প্রযোজনায় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্ষতচিহ্ন’-এর প্রথম দৃশ্যায়ন হবে আগামীকাল।

যশোর হত্যাকাণ্ডের ১৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে উদীচী আয়োজিত অনুষ্ঠানে আপনার স্বনামধন্য সংবাদ মাধ্যমের একজন প্রতিনিধি ও ক্যামেরাম্যান/আলোকচিত্রী প্রেরণ এবং অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য উদীচী’র পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *