মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীর জীবনী

শিল্পী মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীর জন্ম সুনামগঞ্জে, ১৯৫৫ সালে। পিতা প্রয়াত মনোরঞ্জন চক্রবর্তী ও মাতা দীপালী চক্রবর্তীর সাত পুত্রকন্যার মধ্যে তৃতীয় সন্তান মৃদুলকান্তি। বাবা ভালো বাঁশি বাজাতেন ও মা সেতার বাজাতেন। বড়ভাই মৃণালকান্তি তবলা বাদনে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৭৭ সালে সর্বভারতীয় যুব উৎসব ১৯৭৭ (………..)  লোকগীতিতে প্রথমস্থান লাভ করেন (বিশ্বভারতীর ছাত্র হিসেবে যোগদান করে) মৃদুল। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিবারের সবাই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মাতা দীপালী চক্রবর্তী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন সুনামগঞ্জ স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের সতস্যা হিসেবে। বড়ভাই মৃণালকান্তি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে ও তাঁবুতে স্বাথ্যসেবায় নিয়োজিত ছিলেন। বড় বোন রতœা চক্রবর্তী ও মৃদুল ভারতের মেঘালয়ে শিলং, বালাট, মাইলাম, শরণার্থী শিবিরে গান গেয়ে বেড়ান অসহায় মানুষ যাতে মনোবল না হারিয়ে ফেলে। মৃদুল ‘বাংলাদেশ বুলেটিন’ নামে একটি পত্রিকা বিক্রি করে যে অর্থ পেতেন তা জমা দিতেন তৎকালীন ন্যাপ নেতা প্রয়াত পীর হাবিবুর রহমানের কাছে। শিলং-এ পথম বাংলাদেশ মিশনের পক্ষে সভা আহ্বান করা হয় …………… এ দীপালী চক্রবর্তীর নেতৃত্বে। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন অগ্নিকন্যাখ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরী ও সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশন করেন শিল্পী রতœা চক্রবর্তী ও মৃদুল চক্রবর্তী। শিলংয়ে প্রথমবার বাংলাভাষায় বক্তৃতা প্রদান করা হয় ………………-এ। সেই সময় এই সভা মুক্তিকামী বাঙালি মানসে আলোড়ন জাগিয়ে তোলে ও উদ্দীপ্ত করে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে। আমৃত্যু দিপালী চক্রবর্তী সমাজ সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ও সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী।

ইতোমধ্যেই তাঁর গবেষণাকর্মের একটি অধ্যায়- ‘হাসনরাজা : তাঁর গানের তরী’ (১৯৯২), বাংলা একাডেমী প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এই গবেষণা-শিল্পীর লেখা ‘বাংলা গানের ধারা’ (১৯৯৩ প্রকাশ করেছেন। গবেষণাকালে বাউল-ফকিরদের সঙ্গে থেকে মৃদুল বাংলার প্রিয় লোকবাদ্য দোতারাও শিখেছেন এবং এই দোতারার পরিমার্জিত রূপ নিয়েছেন সরোদ ও নকুলবীণার সম্মিলনে। যন্ত্রটির নাম রেখেছেন – সুরশ্রী।

অধ্যাপক মৃদুলকান্তি বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে আমন্ত্রণ পেয়ে সংগীত বিষয়ক বক্তৃতা, পারফর্মমেন্স এবং আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংগ্রহণ করেন। ভারত, ইংল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা ও মরক্কোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার ও ……………………….. প্রদান করেন।

মৃদুলের পেশা ও নেশায় গান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত কোর্স চালু করায় তাঁর অবদান রয়েছে। তাঁকে নিয়োগ দান করে সংগীত বিষয়ে প্রথম পাঠচক্র চালু করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সংগীত বিভাগে অধ্যাপনায় নিয়োজিত।

১৯৯৪ সালে বিশ্বভারতী থেকে “বাংলা সংগীতের ধারা ও লোকসংগীতের সুরে রবীন্দ্র সংগীত” (অষ্টম থেকে বিংশ শতাব্দী) বিষয়ে গবেষণার জন্য পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন।

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ও ফরেন সার্ভিস একাডেমী আয়োজিত সংগীত বিষয়ে পাঠদান ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।