ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট ও তা-বের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানান উদীচী’র নেতৃবৃন্দ। গত ০১ নভেম্বর বিকাল সাড়ে চারটায় বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন-এর সঞ্চালনায় সমাবেশের শুরুতে প্রতিবাদী আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য মিজানুর রহমান সুমন। এরপর বক্তব্য রাখেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, প্রকাশক রবিন আহসান, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠন জীবনানন্দ জয়ন্ত, লেখক ও ব্লগার বাকি বিল্লাহ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি লিটন নন্দী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ, সাবেক ছাত্রনেতা ও সংস্কৃতি কর্মী আকরামুল হক, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে উস্কানি দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে যে তা-ব চালানো হয়েছে তা নতুন কিছু নয়। কক্সবাজারের রামুতে যেভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়েছিল ঠিক একই কায়দায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও হামলা চালানো হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নানা সময়ে, নানা অজুহাতে বরাবরই এধরনের ঘৃণ্য কর্মকা- পরিচালনা করে আসছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কখনোই এধরনের ঘটনার কোন সুষ্ঠু বিচার বা দোষীদের শাস্তি দেয়ার ঘটনা ঘটে না। আহলে সুন্নাত ও হেফাজতে ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা চালানো হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উল্টো হামলার পর তাদেরকে ওই এলাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এসব নিস্ক্রিয়তার ফলে, সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নতুন করে এধরনের তা-ব চালানোতে উৎসাহ পায় বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ না করার ভূমিকা রয়েছে বলেও মনে করেন বক্তারা। তাই, অবিলম্বে সংবিধান থেকে সব ধরনের সাম্প্রদায়িক ধারা বাতিল করে ৭২’এর সংবিধান সম্পূর্ণরুপে পুনর্বহালের দাবি জানান তারা।

শুধুমাত্র কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয়, সব ধর্মের মানুষ একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে মন্তব্য করে বিক্ষোভ সমাবেশের বক্তারা আরো বলেন, স্বাধীন দেশে কোন গোষ্ঠী যদি নির্যাতিত হয় বা অত্যাচারিত হয় তাহলে তা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী কাজ। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই কেন বারবার সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলার ঘটনা ঘটে তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান বক্তারা। এসময় নাসিরনগরের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা ও প্রকারান্তরে প্রশ্রয় দেয়ার ঘটনার নিন্দা জানান। সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চক্রান্ত চলছে মন্তব্য করে এসব ঠেকাতে প্রশাসনকে আরো বেশি সচেতন ভূমিকা রাখার আহবান জানান তারা। সবাই মিলে একযোগে কাজ না করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। তাই, সমাজের সব ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং মানুষে মানুষে সম্পর্কে উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তারা।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার নামে ধারাবাহিকভাবে এধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত নেয়া হয়নি। বরং, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রশাসনের উদাসীনতা হামলাকারীদের আরো বেশি ক্ষতিসাধনে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এছাড়া, ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ওলামা লীগ এবং এর অনুসারী সংগঠনগুলো বারবার সাম্প্রদায়িক উস্কাতিনমূলক কর্মকা- করে গেলেও তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়। অবিলম্বে এসব ধর্মভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক দল ও সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা দাবি জানান বক্তারা। তারা বলেন, সরকার ও প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ কথাটিক সঠিক মর্যাদা রাখতে আগ্রহী কিনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট ও তা-বের ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান উদীচী আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের বক্তারা। এছাড়া, সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একযোগে সমস্ত সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *