রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী

বাংলা সাহিত্যের তিন মহীরুহকে স্মরণ

গান, কবিতা, নৃত্য আর নাটকে প্রাণবন্ত সন্ধ্যায় বাংলা সাহিত্যের তিন মহীরুহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য্যকে স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গত ০৩ আগস্ট সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ আয়োজন করে রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিন কবির গান পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে ‘হে মহামানব একবার এসো ফিরে’ গান তিনটি। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশের সভাপতিত্বে এ পর্বের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি নিবাস দে। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে সাহিত্যকর্ম, রচনা ও জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী। বক্তারা বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী চেতনার আঁধার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য্য বাঙালির মানস গঠনে অপরিহার্য্য ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের রচনা সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, সাম্রাজ্যবাদসহ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আলোকবর্তিকা হিসেবে আমাদের পথনির্দেশ করে চলেছে।

আলোচনা পর্বের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বের শুরুতেই রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তকে নিবেদন করে স্বরচিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাহমুদ সেলিম। এরপর মঞ্চে আসেন উদীচী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যশিল্পী আকাশ। কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সাথে তিনি নাচ পরিবেশন করেন। এরপর ‘প্রেমে, দ্রোহে তিন কবি’ শীর্ষক গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেন উদীচী মিরপুর শাখার শিল্পীরা। গীতি আলেখ্যটি গ্রন্থনা করেছেন তুষার চন্দন। গীতি আলেখ্যের পর রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য তাজিম সুলতানা। তাঁর কণ্ঠে একক সঙ্গীতের পর মঞ্চে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী ডেমরা শাখার শিল্পীরা। এরপর উদীচী কাফরুল শাখার শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। কাফরুলের পরিবেশনার পর সুকান্ত ভট্টচার্য্যরে কালজয়ী কবিতা ‘রানার’-এর সাথে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন আরিফ নূর ও নজরুল ইসলাম। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিমের গ্রন্থনায় ‘দেশপ্রেম থেকে বিশ্বপ্রেমে’ নামের গীতি-আলেখ্য নিয়ে মঞ্চে আসেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। এতে তিন কবির দেশ ভাবনা এবং সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী চেতনা চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়। সবশেষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী নাটক ‘ডাকঘর’ পরিবেশন করে উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগ। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন আসলাম অরণ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *