48 years of Udichi

বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদীচী’র ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

প্রতিষ্ঠার চার যুগ পূর্ণ করলো লড়াই-সংগ্রাম আর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। উদীচী’র ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৯ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টায় আয়োজন করা হয় উদযাপন অনুষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী’র শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন- “এখন দুঃসময় আর নয় দেরি নয়”, “আরশির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে” প্রভৃতি গান। এরপর বয়াতী গান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত লোকশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতী ও তাঁর দল। দু’টি লোক আঙ্গিকের প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন সাইদুর রহমান বয়াতীর শিষ্য আবুল বাশার বয়াতী। এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, উদীচী কানাডা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য আজিজুল মালিক, উদীচী যুক্তরাজ্য শাখার নেতা ও কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ডা. রফিকুল হাসান জিন্নাহ, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার এবং উদীচী’র অন্যতম উপদেষ্টা সাইদুর রহমান বয়াতী।

আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরে উদীচীর উপর বারবারই আঘাত হেনেছে প্রতিক্রিয়াশীল, মৌলবাদী চক্র। ১৯৯৯ সালে যশোরে দ্বাদল জাতীয় সম্মেলন এবং ২০০৫ সালে নেত্রকোনা উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলায় শিল্পী-কর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু, সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, ন্যায়ের সংগ্রাম, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম থেকে উদীচীকে কখনোই বিচ্যুত করা যায়নি। আর কখনো বিচ্যুত করাও যাবে না। তারা বলেন, যে একবার জীবনে উদীচীর আঙ্গিনায় পা রেখেছেন, তিনি কখনোই সাবেবক হতে পারেননা। উদীচীতে কোন সাবেক নেই, সবাই বর্তমান। শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকলেও মানসিকভাবে কেউ কখনোই উদীচী থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন না। তারা আরো বলেন, বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির এই সর্বব্যাপী প্রভাবের যুগেও উদীচীর কর্মীরা এখনও বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বিশ্বের সব প্রান্তেই উদীচীর কর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তারা যেখানেই যান না কেন, সবসময়ই উদীচীর আদর্শকে ধারণ করে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন। শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াকু কণ্ঠস্বর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত ও সাম্যবাদী সমাজ গঠনে লড়াই-সংগ্রামের সংগঠন উদীচী। ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর শিল্পী-সংগ্রামী সত্যেন সেন এবং সাহিত্যিক সাংবাদিক রণেশ দাশগুপ্তসহ সেসময়কার কয়েকজন প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক ভাবধারার মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৈরি সংগঠন উদীচী নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সফলভাবে শুরু করলো ৪৯তম বর্ষের যাত্রা। আলোচনা সভার পর গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী’র শিল্পীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *