বর্ষা উৎসব

প্রকৃতি রক্ষার শপথে উদীচী’র বর্ষা উৎসব উদযাপিত

প্রকৃতি রক্ষার শপথ নিয়ে বর্ষা উৎসব উদযাপন করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ১লা আষাঢ়’১৪২৩ (১৫ জুন’২০১৬) বুধবার সকাল সাতটায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদ আয়োজন করে বর্ষা উৎসব-১৪২৩। সকালে অনুষ্ঠান শুরু হয় যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। আবহমান কাল ধরে বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ঢোল, তবলা, দোতরা, বাঁশি প্রভৃতি যন্ত্রের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় “আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই” গানটি। এরপর শুদ্ধ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন গুণী শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। সকালের শুভ্র প্রকৃতিতে প্রিয়াঙ্কার অনবদ্য গায়কীর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে অসাধারণ আবহ তৈরি হয়।

প্রিয়াঙ্কা গোপের পর মঞ্চে দলীয় পরিবেশনা নিয়ে উপস্থিত হয় উদীচী ধানমন্ডি শাখা। উৎসবে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন অগ্নিবীণা ও ফোক বাংলা’র শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশনে ছিলেন দেশের প্রথিতযশা শিল্পী মহাদেব ঘোষ, অনিমা মুক্তি গোমেজ, বুলবুল ইসলাম, বিমান বিশ্বাস, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, জিনাত ফেরদৌস, নৃপেন মিস্ত্রী, সাজেদা বেগম সাজু, শেলী রউফ প্রমূখ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, বেলায়েত হোসেন, শিখা সেন গুপ্তা প্রমূখ। এছাড়া, নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যম ও স্পন্দন-এর মতো নৃত্যদল। বর্ষা উৎসবে মাহমুদ সেলিমের গ্রন্থনা ও নির্দেশনা এবং বিপ্লব রায়হানের পরিচালনায় বিশেষ গীতি-আলেখ্য “বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর” পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। এছাড়াও, ছিল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মিরপুর, বাড্ডা, তুরাগ, কাফরুল ও নবাবগঞ্জ শাখার শিল্পীদের পরিবেশনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের গান, কবিতা এবং লোকগানের পরিবেশনায় মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। প্রথা অনুযায়ী, প্রতিটি পরিবেশনা শেষে শিল্পী এবং দলগুলোকে উদীচীর পক্ষ থেকে গাছ উপহার দেয়া হয়। প্রকৃতি রক্ষার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বর্ষা উৎসব আয়োজনের শুরু থেকেই অতিথিদের গাছ উপহার দিয়ে আসছে উদীচী।

অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি পর্যায়ে আয়োজিত হয় বর্ষা কথন। এতে অংশ নেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানী, সহ-সভাপতি শংকর সাওজাল এবং উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান ইকবাল। আর উদীচীর পক্ষ থেকে বর্ষার ঘোষণা পাঠ করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি ও বর্ষা উৎসব-১৪২৩ প্রস্তুতি পরিষদের আহবায়ক নিবাস দে। এসময় উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানী বলেন, শুধু শহুরে মানুষই নয়, গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের কাছে বর্ষার যে চিত্র তা সবার সামনে ফুটিয়ে তোলা উদীচী’র বর্ষা উৎসব আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য। অন্য বক্তারা বলেন, শহরের মানুষের কাছে যে বর্ষা প্রেমময়, রোমাঞ্চকর- সেই একই বর্ষা কোন কোন সময়ে মেহনতী মানুষের কাছে অসীম দুর্ভোগ আর দুর্দশা বয়ে নিয়ে আসে। আবার, প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বর্ষা ও বৃষ্টিপাতের যে গুরুত্ব তা-ও অনেক সময় আমরা অনুধাবন করতে পারি না। তাঁরা আরো বলেন, তৃষিত হৃদয়ে শান্তির পরশ বুলিয়ে রুক্ষ শুস্ক প্রকৃতিতে সবুজের ছোঁয়া দিতে বর্ষা সমাগত। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তখর ঝিরঝির বারিধারায় তাকে শান্ত করে ষড়ঋতুর অন্যতম সৌন্দর্য্যম-িত ও প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরপুর বর্ষা। বাঙালির প্রাণের এই ঋতুকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছরই উদীচী আয়োজন করে বর্ষা উৎসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *