পশ্চিমবঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

পশ্চিমবঙ্গেও এখন একুশে উদযাপিত হচ্ছে। অবশ্যই ভিন্ন ভাবে। তবে এই উদযাপন খুব বেশী দিন আগের ঘটনা নয়। মাত্র কুড়ি বছরের। খুব বড় আকারে হয় না। তবে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে হয়। আর এই উদযাপনের ফলে পশ্চিমবঙ্গের দৈনিকগুলোতে দিনটির উল্লেখ ঘটে একটি বিশেষ দিবস হিসাবে।
আগে ঘটতো না, এখন ঘটে, এর কারণ কী? এই বিষয়টাই বিশেষভাবে লক্ষ করবার ব্যাপার। সে প্রসঙ্গে আমরা একটু পরে আসছি। তার আগে উল্লেখ করা দরকার পশ্চিমবঙ্গে সকলে যে একভাবে উদযাপন করে একুশে ফেব্রুয়ারি তা কিন্তু নয়, পার্থক্য রয়েছে। যেমন বেশ ক’বছর পূর্বে কলকাতায় দু’টি মূল অনুষ্ঠানের খবর পাওয়া গেছে। একটির উদ্যোক্তা বঙ্গাব্দ চতুর্দশ শতবর্ষপূর্তিকে উপলক্ষ করে গঠিত সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের উৎসব কমিটি। অপরটির উদ্যোক্তা একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি। দ্বিতীয়টি একটি স্থায়ী কমিটি, যারা গত কুড়ি বছর ধরে অনুষ্ঠান করছে। প্রথমটি ছিল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে-ওঠা একটি সংস্থা।
চতুর্দশ শতবর্ষপূর্তি উদযাপনের উদ্যোক্তারা যে আয়োজন করেছিল তার খবর জানলাম ‘প্রবাসী আনন্দবাজার’ পত্রিকায়। বেশ বড় করে দেওয়া হয়েছে। আর একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটির অনুষ্ঠানের খবর আছে কমিটির নিজের প্রকাশিত ‘একুশের ডাক’ স্মরণিকায়। একুশের প্রতি এই দুই মহলের ধারণার ভেতর পার্থক্য একেবারেই মৌলিক। শতবর্ষপূর্তির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, বোঝা গেল, একুশে ফেব্র“য়ারিকে দেখেন একটি আবেগের দিন হিসেবে। তাঁরা শহীদদেরকে স্মরণ করেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রভাতফেরি হয়েছে; পরে গান, আবৃত্তি, আলোচনা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটির আয়োজনেও আবেগ ছিল, কিন্তু আরো কিছু ছিল যা অপর অনুষ্ঠানে ছিল না; সেটি হলো একটি স্পষ্ট বক্তব্য। এই বক্তব্যটি একুশে ফেব্রুয়ারি অন্তরের যে ঘটনা সেটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছে এবং তার তাৎপর্যটিকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তুলে ধরেছে। একুশে ফেব্র“য়ারি হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, সামন্তবাদবিরোধী আন্দোলন; উর্দুর আগ্রাসন ছিল সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ধাঁচের। পশ্চিমবঙ্গের একুশে ফেব্র“য়ারি উদযাপন কমিটি একুশের এই অন্তর্গত চরিত্রটি চিনে নিয়েছে, এবং হিন্দির সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও বিজেপি’র মৌলবাদী তৎপরতার মুখে একুশের মতো একটি চেতনা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে সচেতন করতে চাইছে।
দুই উদযাপন তাই দুই ধারায়। একটি একদিনের, অপরটি সারা বছরের। একটি শুধু আবেগ বোঝে, অপরটি চায় প্রতিরোধ। একটি সাময়িক, অপরটি দীর্ঘস্থায়ী। একুশে ফেব্র“য়ারিকে চিনতে না-পারাই হচ্ছে কারণ যার জন্য পশ্চিমবঙ্গে একুশ পালনে বিলম্ব ঘটেছে। একুশকে যাঁরা কেবল বাংলা ভাষার প্রতি পূর্ববঙ্গের মানুষের প্রীতির চিহ্ন হিসাবে দেখেছেন তাঁরা একে চিনতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। প্রীতি তো অবশ্যই, কিন্তু সেই সঙ্গে প্রতিরোধও। প্রতিরোধেই শক্তি তার, প্রাণ যদিও প্রীতিতে।
পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের অনেকের ভেতরই পূর্ববঙ্গ সম্পর্কে যথার্থ ধারণার অভাব ছিল। একুশে ফেব্র“য়ারি উপলক্ষে আজ সেখানে যে আবেগ দেখা যায়, এক সময়ে তারই প্রকাশ ঘটতো পিঠ-চাপড়ে দেবার মনোভাবে। ক্লাশের খারাপ ছেলেটি হঠাৎ ভালো ফল করলে ক্লাশ শিক্ষক যেমন ভাব ও ভঙ্গি করেন, বা করতে পারেন ব্যাপারটা ছিল অনেকটা সে-রকমেরইবাঃ, বেশ করেছো তো, আশাই করি নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার বেশ আগে, ১৯৫৬ তে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাহিত্য সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন সাহিত্যিক এসেছিলেন। তাঁদের একজন ফিরে গিয়ে একটি আবেগপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছিল তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। উল্লেখ করেছিল যে, পদ্মায় স্টীমারে যাবার সময় সন্ধ্যা হওয়ার কালে তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দেখলেন নামাজ বিছিয়ে জায়নামাজ পড়ে নিচ্ছেন; পরে ঢাকায় এসে আরো অভিভূত হয়েছেন, দেখে শুনে বুঝেছেন যে এরা যেন পাখির ভাষায় কথা বলে। দুটোই ভুল ধারণা, অবশ্যই। প্রথমটির চেয়ে কম ভ্রান্ত নয় দ্বিতীয়টি। পাখির ভাষায় নয়, পূর্ববঙ্গ তখন কথা বলতো প্রতিবাদের ভাষায়, যে প্রতিবাদে মুখর ছিল একুশে ফেব্র“য়ারি, যার দরুন স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ।
যতই আবেগ থাক পৃষ্ঠপোষকের মনোভাব থাকলে একুশে ফেব্র“য়ারিকে বোঝা কঠিন। কলকাতার একুশে ফেব্র“য়ারি উদযাপন কমিটি মনে হয় এই মনোভাব থেকে মুক্ত, যে জন্য তাঁরা একুশকে দেখেন অন্যভাবে, দেখেন তার প্রতিবাদ, দেখেন তাঁদের নিজেদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় তার প্রয়োজন। এই কমিটির একটি স্মরণিকা ‘একুশের ডাক’; অপর একটি অনিয়মিত প্রকাশনা, নাম যার ‘স্বাধীন বাংলা’। তার দু’টি কপি এবং ‘১৪০০ সাল’ নামে একটি বুলেটিন আমাদের হাতে এসেছিল। একয়টি ছোট ছোট প্রকাশনা পড়ে ধারণা হলো যে তাঁদের উদযাপন আমাদের একুশের প্রতি শুধু যে শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য তা নয়; উদযাপন তাদের নিজেদের প্রয়োজনেও বটে।
‘একুশের ডাক’ স্মরণিকাটিতে কয়েকজন বিশিষ্ট লেখকের ছোট ছোট লেখা আছে। স্মরণিকাতে যেমনটি থাকার কথা। সবক’টি লেখাতেই প্রতিরোধের কথাটা পাওয়া গেল। প্রয়াত সাহিত্যিক নন্দগোপাল সেনগুপ্ত একুশে ফেব্রুয়ারিকে ফরাসী বিপ্লবের ধারায় ঐতিহাসিক দিন ১৪জুলাইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “মাতৃভাষার স্বাধিকার রক্ষার সংগ্রামে আত্মদান করে বাংলাদেশের মানুষ ২১ফেব্র“য়ারিকে ঐতিহাসিক মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। ১৪জুলাই বাস্তিলের অবরোধ ভেঙে ফরাসীরাও একইভাবেই উদঘাটিত করেছেন ইতিহাসের এক নব দিগন্ত।” কোনো তুলনাই যথার্থ নয়; এই তুলনাও নয়, তবু একুশে ফেব্র“য়ারি যে একটি নতুন সূচনাকে চিহ্নিত করেছিল ১৯৫২তে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এই ব্যাপারটা বুঝতে না পেরেই মনে হয় ওই স্মরণিকাতেই একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন সাংবাদিক অমিতাভ চৌধুরী। সেটি এই যে, “পশ্চিমবঙ্গে ১৯৬১ সালের ১৯মে বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষায় পুলিশের গুলিতে ১১ জন শহীদ হন, অথচ তাদের কথা তেমন ভাবে মনে করা হয় না কেন? যেমন ভাবে পূর্ববঙ্গের একুশে ফেব্র“য়ারিকে স্মরণ করা হয়।” তাঁর ভাষায়, “ওই শহীদদের আত্মদান কি তুলনায় খাটো? নাকি তাতে গ্ল্যামার নেই। বঙ্গ-ভাষাপ্রীতি যদি সত্যি হয় তাহলে একুশে ফেব্র“য়ারি এবং ঊনিশে মে আমার-আপনার কাছে সমান।”
কিন্তু একুশে ফেব্র“য়ারি গ্ল্যামারের দিন নয়, শোকের দিনও নয় আবার, একই সঙ্গে শোকের ও জয়ের দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল ভাষার সম্মান চায় নি, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছিল। এ হচ্ছে নিরস্ত্র অভ্যুত্থানের একটি দিন, সেই অভ্যুত্থান সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে। ঠিক এই কথাটাই বলা হয়েছে স্মরণিকায় এবং অন্য প্রকাশনা দু’টির বিভিন্ন লেখাতে।
‘স্বাধীন বাংলা’ নামটি বেশ উগ্র। এঁর সম্পাদক দু’জনজ্যোতির্ময় দত্ত ও আজিজুল হক, এঁরা দু’জনই এক সময়ে উগ্রপন্থী হিসাবে পরিচিত ছিলেনযদিও দু’জন দুই বিপরীত প্রান্তের। জ্যোতির্ময় দত্ত একটি ইংরেজি দৈনিকে কাজ করতেন, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার সময়ে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন, যেমন হয়েছিলেন অন্য কয়েকজন সাংবাদিক, তাঁদেরকে মনে করা হতো উগ্ররূপে মার্কিনপন্থী, ওদিকে এর অপর সম্পাদক আজিজুল হকও জেলে ছিলেন, উগ্র নকশালপন্থীরূপে। তাঁরা একত্র হয়েছেন বাংলাকে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুক্ত করবার প্রয়োজনে। এঁদের পত্রিকার নাম শুনলে হঠাৎ মনে হবে ‘বঙ্গসেনা’ কিংবা ‘আমরা বাঙালি’র ভ্রাতৃপ্রতিম বুঝি। স্মরণীয় যে, ‘বঙ্গসেনা’ উগ্ররূপে সাম্প্র্রদায়িক, তাদের লক্ষ বাংলাদেশের একাংশ উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করা; ‘আমরা বাঙালি’ মার্কিন অর্থে পরিচালিত, এদের কাজ প্রধানত ত্রিপুরা রাজ্যে, সেখানে বাঙালিদের সঙ্গে ত্রিপুরাবাসীদের কলহ বাঁধিয়ে সিপিএমকে প্রতিহত করা এদের অভিপ্রায়। বস্তুত ‘স্বাধীন বাংলা’ পত্রিকায় ধিক্কার আছে ওই দুই তৎপরতার বিরুদ্ধেই। এঁরা মনে করেন সাতচল্লিশের ১৫আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীন হয় নি; ইংরেজ চলে গেছে, কিন্তু ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে ক্ষমতায় বসিয়ে গেছে তাদের অনুগতদেরকে। ইয়ে আজাদী ঝুটা হায়, লাখো ইনসান ভূখা হায়”, এই রণধ্বনি ১৯৪৭ সালেই উঠেছিল, কমিউনিস্ট পার্টি তুলেছিল।

সেটা ছিল এক দৃষ্টিভঙ্গির ফল, সে-দৃষ্টিভঙ্গি শ্রেণীগত। এঁরা বিষষটিকে দেখছেন অন্যভাবে, জাতিগত দৃষ্টিতে। এঁদের বক্তব্য, ভারতবর্ষ কখনো একজাতির দেশ ছিল না, এখানে বিভিন্ন জাতিসত্তা রয়েছে যাদের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন; ব্রিটিশ আমলে সকল জাতিসত্তার ওপর সাম্রাজ্যবাদের নিপীড়ন চলেছিল, সাতচল্লিশের পরেও তার অবসান হয় নি। লোক বদলেছে, কিন্তু নিপীড়ন বদলায় নি। হিন্দিভাষি উত্তর ভারত এখন শাসন ও শোষণ চালাচ্ছে অন্যান্য অঞ্চলের ওপর, যে জন্য দক্ষিণ ভারতে, কাশ্মীরে, আসামে, বাংলায় মানুষ আজ অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ। এঁরা জাতিসত্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আগে সকলকে স্বাধীন করতে হবে, তারপরে হয়তো দেখা যাবে সকলেই চাইছে এক সঙ্গে থাকতে; তখন সম্পর্কটা পীড়নের হবে না, হবে মৈত্রীর। এমনকি কাশ্মীরকেও এঁরা স্বাধীনতা দেবার পক্ষে, এখনই; যাতে কাশ্মীর একটি নিষিদ্ধ এলাকা না হয়ে ভারতের সুইজারল্যান্ডে পরিণত হয়যেখানে অন্যরাজ্যের মানুষ নিরাপদে ভ্রমণে যেতে পারে, ভূস্বর্গকে পেতে পারে সত্যিকারের ভূস্বর্গ রূপে।
১৪০০সালের ওপর প্রকাশিত বুলেটিনটিতে একুশে ফেব্র“য়ারি উদযাপন কমিটির সম্পাদক কেশব মুখোপাধ্যায় লিখেছেন যে, এমনও জিজ্ঞাসা এখন পশ্চিমবঙ্গে উঠেছে যে ১৯০৫সালের বঙ্গভঙ্গ-রদ ঠিক কাজ হয়েছিল কিনা; কেননা সেদিন যদি বঙ্গ ভাগ হতো তাহলে মুসলিম মধ্যবিত্ত বিকাশের সুযোগ পেতো, এবং বিকশিত হিন্দু মধ্যবিত্তের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বটা এতোটা তীব্র হতো না, যতটা তীব্র সেটা পরে হয়েছিল।
সব ক’টি প্রকাশনাতেই এই উপলব্ধিটি ব্যক্ত হয়েছে যে, ভারতে বাংলা যেভাবে কোণঠাসা হচ্ছে তাতে তা প্রাদেশিক ভাষা তো বটেই অচিরেই হয়তো মৈথিলী ভাষার মতো ‘হেঁসেলে’র বুলিতে পরিণত হবে। কোথায় থাকবেন রবীন্দ্রনাথ, কোথায় কে। ইতোমধ্যে বাঙালি বেকারত্বের অভিশাপে ভুগছে। কলকাতার অভিজাত এলাকায় এখন বাঙালি নেই; দিল্লি থেকে বাঙালিকে মেরে হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তারা বিদেশী এই অভিযোগ তুলে; অপরদিকে নানা প্রদেশ থেকে লোক এসে ঢুকে পড়ছে পশ্চিমবাংলায়। যেভাবে ঠেলা হচ্ছে বাঙালিকে তাতে তাকে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে না পড়তে হয়। ইংরেজ শাসনামলে ১৯৩৫ সালের সংবিধানে রাজ্যগুলোকে নিজস্ব বেতার কেন্দ্র স্থাপনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীন ভারতে সে অধিকারটুকুও কল্পনার বাইরে। বরঞ্চ ‘দূরদর্শন’ এখন বাঙালির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। ওদিকে বাংলা চলচ্চিত্র মারাত্মকভাবে হিন্দির দ্বারা আক্রান্ত। চলচ্চিত্র না হয় না দেখলেন, কিন্তু টেলিভিশন না দেখে উপায় কি, সে তো ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতরে। হিন্দি সাম্রাজ্য এখন বাঙালির অন্তঃপুর পর্যন্ত প্রসারিত। পালাবেন কোথায়?
না, পালাবার উপায় নেই। পত্রিকায় সঠিকভাবেই বলা হয়েছে, ‘ইংরেজ আমলেও বাংলা ততোটা শোষিত হয় নি’ যতটা হয়েছে তথাকথিত স্বাধীনতার ৬৬ বছরে। আর এই যে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-এর পেছনে রয়েছে আরেক উৎপাত। সে হচ্ছে বিজেপি তথা মৌলবাদ। মৌলবাদীরা রণধ্বনি তুলেছে ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’। ভারত হিন্দুস্তান, সে হিন্দুর রাজ্য, তার ভাষা তাই হিন্দিই হবে, কেননা হিন্দু আর হিন্দি অভিন্ন বটে। এই মৌলবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধেও একুশ উদযাপন কমিটি পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালিদেরকে সচেতন করে দিচ্ছে।
সবকিছুই ঘটছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায়। ভারত একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। পুঁজিবাদ বৈষম্য সৃষ্টি করে; ভারতে যে-বৈষম্য অব্যাহত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুঁজিবাদ শোষণ করে, সেই শোষণও বাড়ছে। হিন্দির ওই আগ্রাসন শোষণ ও বৈষম্য সৃষ্টির যে প্রক্রিয়া রাষ্ট্র চালু রেখেছে তারই অংশ বটে। অন্যদিকে ইংরেজি আসছে চলে। সেও পুঁজিবাদের দোসর, একজন। পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালিকে আজ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে হবে, যদি সে তার নিজস্বতাকে রক্ষা করতে চায়। একথা এঁরা জানেন এবং এটি বড়ই সত্য কথা।