গৌরবের ৪৫ বছর: সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ধ্রুবতারা

প্রাণের উচ্ছাসে ভেসে, উচ্ছলতায় পরিপূর্ণ হয়ে লড়াই, সংগ্রামের ইতিহাসের উত্তরাধিকার বহন করার প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর উদযাপন করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। উদীচী’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজন করা হয় আনন্দ অনুষ্ঠানমালার। শুরুতেই অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন বিভিন্ন সময়ে উদীচী’র লড়াই, সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা পাঁচজন সংগ্রামী। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী’র শিল্পীরা। জাতীয় সঙ্গীতের পর শুরু হয় আলোচনা সভা। উদীচী’র কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে ছিলেন ভাষা সৈনিক আহমেদ রফিক, উদীচী’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, হাবিবুল আলম, উদীচী কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন এবং ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ। এসময় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সংগঠন হিসেবে এবছর উদীচী’র একুশে পদক প্রাপ্তির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করেন উদীচী’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। এরপরই পরিবেশন করা হয় উদীচী’র গান “আরশির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে…”। ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উদীচী’র বিভিন্ন জেলা ও শাখা সংসদের ৪৫ জন শিল্পী একযোগে গানটি পরিবেশন করেন। এসময় চত্বরে উপস্থিত দর্শকরাও গানের সাথে গলা মেলান। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী’র সহ-সভাপতি শংকর সাঁওজাল।

আলোচনা পর্বে ভাষা সৈনিক আহমেদ রফিক বিগত সাড়ে চার দশক ধরে বাংলাদেশের সকল সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের উদীচী’র গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। ভবিষ্যতেও দেশের যেকোন সঙ্কট মোকাবিলায় উদীচী বলিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তার ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন আহমেদ রফিক। স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি উদীচীর উপর বারবার আঘাত হানা সত্ত্বেও উদীচী’র অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন উদীচী’র সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম। বর্তমানে নানা ধরণের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের দল ও তাদের দোসরদের আবারো প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে হাবিবুল আলম বলেন, বরাবরের মতোই উদীচী এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে উদীচী’র শিল্পী-কর্মীরা হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল ছেড়ে অস্ত্র হাতে দেশের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তারা আবারো একই ভূমিকা পালন করতে পিছপা হবে না বলেও ঘোষণা দেন উদীচী’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল আলম। আর, উদীচী’র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার বলেন, দেশে বর্তমানে যে সঙ্কট চলছে তাতে প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আজ অস্তিত্বের লড়াইয়ের মুখোমুখি। এ লড়াইয়ে জিততে হলে অবশ্যই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রবীর সরদার। সভাপতির বক্তব্যে উদীচী’র কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানী বলেন, উদীচী বরাবরই দেশের সঙ্কট মুহূর্তে তার দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে উদীচী’র শিল্পী-কর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, উদীচী’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আরিফ নূরকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী উদীচীকে ভয় দেখানোর অপচেষ্টা করলেও তারা সফল হয়নি। কোন ধরণের হামলায় ভীত না হয়ে উদীচী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাবে বলেও দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন কামাল লোহানী।

আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেনের সঞ্চালনায় এ পর্বে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন- “আমরা মানুষের জয়গান গাই”, “হুঁশিয়ার, ও সাথী কিষান মজদুর ভাইসব হুঁশিয়ার”, “ধর ধর ধর রাজাকার রে ধর”, “গ্রাম থেকে জেগে ওঠো” প্রভৃতি গান। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ও গেন্ডারিয়া শাখা। এছাড়া, একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুরাইয়া পারভীন, আশরাফুল আলম ও বিপ্লব রায়হান। এসব গানের মধ্যে ছিল “আমি মাড়ের সাগর পাড়ি দিব রে”, “আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা” প্রভৃতি। নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী কাফরুল শাখার শিল্পীরা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন, অলক বসু ও শাহাদাত হোসেন নিপু। আর দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় আবৃত্তি বিভাগ।

১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কৃষক নেতা সত্যেন সেন ও প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক রণেশ দাশগুপ্তসহ সেসময়ের বেশ কয়েকজন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্বের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় লড়াই, সংগ্রাম ও গৌরবের সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সত্যেন সেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জাতীয় মুক্তি ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও লক্ষ্য নিয়ে সত্যেন সেন ১৯৪৬ সালে গঠন করেন কবিয়াল দল। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর ১৯৪৯ পর্যন্ত আত্মগোপনে থাকেন তিনি। এরপর ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত কারান্তরালে থাকতে বাধ্য হন সত্যেন সেন। তবে, এত নির্যাতনের মধ্যেও কৃষকদের মধ্যে অবিরত কাজ করে গেছেন তিনি। কৃষকদের সাথে মিশে গিয়ে তিনি অনুভব করেন, বক্তৃতার চেয়ে গান দিয়েই কৃষকদেরকে বেশি উদ্বুদ্ধ করা যায়। তাই, ১৯৫৬’র ঢাকা জেলা কৃষক সম্মেলনের পর সত্যেন সেন এমন একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন তৈরির তাগিদ হৃদয়ে লালন করেন- যে সংগঠন গান, নাটকের মধ্যে দিয়ে সমাজ ও সংস্কৃতি বদলের আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ১৯৫৮ সালে তিনি একটি গানের দল তৈরি করেন। এই দল তৈরির পরপরই সত্যেন সেন বেশ কয়েক বছর কারারুদ্ধ থাকলেও শক্ত হাতে হাল ধরে তাঁর তৈরি এ দলটির কর্মকাণ্ড টিকিয়ে রাখেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু ও সাইদুর রহমান। সাথে ছিলেন আবদুল করিম, আবদুল খালেক, শুভ রহমান, মোজাম্মেল হোসেন মন্টু, আবেদ খান, নিয়ামত হোসেন, ইউসুফ পাশা, ইয়াহিয়া বখত প্রমুখ।

১৯৫৮ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত এই নামহীন দলটি বিভিন্ন কৃষক সমাবেশে ও শ্রমিক জমায়েতে গান গেয়েছে, যার বেশিরভাগই ছিল বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের গান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের দেশ পর্যায়ের গান, ভারতীয় গণনাট্য সংঘের তৎকালীন প্রচলিত কিছু বাংলা ও হিন্দী গণসঙ্গীত এবং সত্যেন সেনের নিজের লেখা ও সুর করা গান। ১৯৬৫-৬৭ তে এর সাথে যুক্ত হন বদরুল আহসান খান, মোস্তফা ওয়াহিদ খান, রাজিয়া বেগম, আখতার হুসেন, পারভেজ শামসুদ্দিন, মজনু মনির প্রমুখ।

প্রথমে নারিন্দায় সাইদুর রহমানের বাসায় দলটির মহড়া শুরু হয়। এরপর ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের দ্বারা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিতাড়িত হয়ে শান্তিনগরে পীর হবিবুর রহমান মোর্শেদ আলী ও মোনায়েম সরকারের মেস যা ন্যাপের মেস নামে পরিচিত ছিল- সেখানে উঠে আসে দলটি। রহিমা চৌধুরানীর এই বাসাটিতে মহড়ার বিষয়েও স্থানীয় মসজিদ কমিটি আপত্তি জানালে দলটির শুভানুধ্যায়ীরা পাল্টা হুমকি প্রদান করেন এবং দলটির বিরুদ্ধে মসজিদে প্রচারিত ইসলামী ছাত্র সংঘের লিফলেট কেড়ে নেন। এতে কাজ হয়। এসময় একদিন সত্যেন সেন দলটির নামকরণের প্রস্তাব দেন এবং নিজেই নাম রাখেন “উদীচী”।

পাকিস্তানি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে যখন বাংলার আপামর মানুষ ফুঁসে উঠছিল, একটি কালজয়ী গণঅভ্যুত্থান যখন উঁকি ঝুঁকি মারছে, ঠিক তেমন একটি সময়ে ঢাকা তথা গোটা বঙ্গদেশের গণসংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ঔপন্যাসিক সত্যেন সেনের নেতৃত্বে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সত্যেন সেনের মত নিবেদিতপ্রাণ আদর্শবাদী, সৎ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নেতৃত্বের গুণে উদীচী খুব দ্রুত বিকশিত হতে থাকে। সর্বপ্রথম উদীচীর যে আহবায়ক কমিটি গঠিত হয় তার আহবায়ক ছিলেন কামরুল আহসান খান। আর সদস্য ছিলেন সত্যেন সেন, গোলাম মোহাম্মদ ইদু, মোস্তফা ওয়াহিদ খান, ইকরাম আহমেদ, আখতার হুসেন, বদরুল আহসান খান, রাজিয়া বেগম, মঞ্জুর মোরশেদ প্রমুখ। এছাড়াও ছিলেন ইকবাল আহমেদ, মাহফুজ আলী মল্লিক, তাজিম সুলতানা প্রমুখ।

রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহের সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি ঝড়-ঝঞ্ঝা-দৈব-দুর্বিপাকে, আন্দোলনে-সংগ্রামে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে উদীচী। ১৯৭০ সালের প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলোর লক্ষ লক্ষ সহায় সম্বল হারানো মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় উদীচী। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাইফেল হাতে সরাসরি যুদ্ধে নামে উদীচীর শিল্পীকর্মীরা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা অস্ত্র জমা দিয়ে আবার হাতে তুলে নেয় ঢোল, করতাল, হারমোনিয়াম, তবলা, নাটকের পাণ্ডুলিপি। দেশ গড়ার সংগ্রামে আর সবার মত শরীক হয় উদীচীর শিল্পীকর্মীরাও।

১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সমগ্র জাতি স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক সামাজিক সকল কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু পালিয়ে বাঁচতে জানে না উদীচীর শিল্পীকর্মীরা। অচিরেই সংগঠিত হয়ে ’৭৫ এর ডিসেম্বর মাসে উদীচীর শিল্পীরা শিল্পকলা একাডেমীর অনুষ্ঠানে সমবেত কন্ঠে প্রতিবাদী গান ধরে। এরপর ১৯৭৬ এর একুশের অনুষ্ঠানে সেন্টু রায়ের পরিকল্পনায় ৬ ফুট উচ্চতায় খালি মাইক্রোফোন, ডায়াসে পাইপ আর চশমা রেখে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে উদীচী।

উদীচী কখনোই গণসংস্কৃতি চর্চা থেকে দুরে সরে যায়নি। ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী প্রথমবারের মত আয়োজন করে তিন দিনব্যাপী লোক সঙ্গীত উৎসব। এ উৎসবেই লোকশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতী এবং চট্টগ্রামের বিখ্যাত ঢোলবাদক বিনয়বাশী জলদাস প্রথমবারের মত ঢাকার কোন মঞ্চে তাদের অনবদ্য পরিবেশনা তুলে ধরেন। ’৯১ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বারের মত আয়োজিত হয় লোকসঙ্গীত উৎসব, যেখানে যোগ দেন সিলেটের প্রখ্যাত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম। এরপর ১৯৯৩ সালে যশোরে এবং ’৯৭ সালে ঢাকায় আয়োজন করা হয় গণসঙ্গীত উৎসবের।

উদীচী শুধুই একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়, উদীচী একটি আন্দোলন। উদীচী কেবল সংস্কৃতিচর্চা করে না, গণমানুষের সংস্কৃতি চর্চার পথ নির্দেশও করে। সত্যেন সেন খুব সচেতনভাবেই উদীচী নামটি নির্বাচন করেছিলেন। ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, উদীচী অর্থ উত্তর দিক, বা ধ্র“বতারার দিক। দিকহারা নাবিকেরা যেমন উত্তর দিকে ধ্র“বতারার অবস্থান দেখে তাদের নিজ নিজ গন্তব্য স্থির করেন- তেমনি এদেশের সংস্কৃতি তথা গণমানুষের সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক আন্দোলন সবকিছুই উদীচীকে দেখে তার চলার পথ চিনতে পারবে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম ও লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে উদীচী। উদীচীর পঁয়তাল্লিশ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস নানা চড়াই-উৎরাই, বাধাবিপত্তি, আনন্দ বেদনার ইতিহাস। কিন্তু উদীচীর পথচলা কখনও থেমে থাকেনি, থাকবেও না। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বাঙালির সকল গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামে অনবদ্য ভূমিকা পালন এবং অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল জাতি গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে উদীচী। জাতীয় পর্যায়ে এ অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ উদীচীকে এবার প্রদান করা হয়েছে ‘একুশে পদক ২০১৩’। এ স্বীকৃতির সাথে সাথে উদীচীর দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। দেশের রাজনীতির চলমান সঙ্কটের পেছনে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ সুস্পষ্ট বলে মনে করে উদীচী। এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদীচীর সাংস্কৃতিক সংগ্রাম জাতিকে আবারও পথ দেখাতে সাহায্য করবে নিশ্চয়।