গান এবং বিজ্ঞান এবং উদীচীর গান : মাধব রায়

মানব শিশু যেমন মাতৃগর্ভ থেকেই তার হৃদস্পন্দন শুরু করে দেয় এবং জন্মের পর দৈনিক এক লক্ষেরও বেশি বার, বছরে চার কোটিরও বেশিবার স্পন্দিত হয় তার হৃদয়, তেমনি তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ শুরু হয় মাতৃগর্ভেই। বড় হয়ে আর বুড়ো হয়ে সে বুদ্ধিজীবী হোক বা না হোক, তার বুদ্ধির শুরু মায়েই পেটেই। বৃদ্ধির বিকাশ নির্ভর করে তা মস্তিস্কের নিউরনের মানের উপর। ১৪ থেকে ১৫ কোটি নিউরনের গুণগত মৌলিক গঠন শিশুটি জন্মসূত্রেই পেয়ে থাকে। জন্মের পর তার নিউরনের গুণগত পরিবর্তন হতে থাকে প্রায় দশ বছর পর্যন্ত। সেই দশ বছর তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তখন নিউরেনের মানের যে পরিবর্তন হয় তা তার অবস্থান বা পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। নিুমানের নিউরন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশু যদি বছর খানেক অনুকূল পরিবেশে লালিত পালিত হয়, তবে তার নিউরনের মান অনেকখানি উন্নত হয়। আবার উচুমানের নিউরন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশু যদি দশ বছর পর্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে বড় হয়, তবে তার নিউরনের মান নিুপর্যায়ে চলে যায় এবং এরপর সাধারণত নিউরনের মানের আর উন্নয়ন হয় না।

আমরা প্রতিদিন যে শব্দ শুনি, তাকে বিজ্ঞানের ভাষায় দুইভাগে ভাগ করা যায়। সুরযুক্ত শব্দ বা সুশ্র্যাব্য শব্দ। যে শব্দ মানুষের জন্য শ্র“তিমধুর তাই সুরযুক্ত শব্দ। তবে এটি মনোবিজ্ঞানের ভাষায়। কারন একই শব্দ মানুষ তার নিজ নিজ রুচিভেদে শ্রুতিমধুর ও শ্রুতিকটুর পর্যায়ে ফেলে। একজন ব্যান্ডসঙ্গীত শ্রোতা শাস্ত্রীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শুনলে নাক উচু করে টিভি চ্যানেল বদলে ফেলে। তেমনি একজন রাগসঙ্গীত শ্রোতা ব্যান্ডসঙ্গীতকে ততোটা গুরুত্বের সাথে শ্রবণ করেন না। একই সঙ্গীত এক একজনের কাছে এক এক রকম। কাজেই পদার্থ বিজ্ঞানে সুরযুক্ত শব্দ বলা হয় যে শব্দের উৎসের কম্পন নিয়মিত, পর্যাবৃত্ত এবং নিরবিচ্ছিন্ন। পর্যাবৃত্ত মানে হলো যা পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়। যেমন – পিয়ানো, গিটার, বাঁশি, হারমোনিয়াম নিসৃত শব্দ বা চর্চা করা গলায় মানুষের গান। এটি সুরযুক্ত বা শ্রুতিমধুর শব্দ। আরেকটি হলো সুরবর্জিত বা কোলাহল। হাট বাজারের শব্দ, ট্রাকের হর্ণ, ইত্যাদি শব্দ। উৎসের কম্পন অনিয়মিত, অপর্যাবৃত্ত হলে এই শব্দকে সুরবর্জিত বা কোলাহল বলা হয়। শব্দের উৎস কম্পিত হলেই শব্দ উৎপন্ন হয়। আর কম্পনের একটি হিসাব আছে। কোন উৎস প্রতি সেকেন্ডে যতবার কাঁপে, তাকে উৎসের কম্পাংক বলি।

আমরা গান করার সময় বা কথা বলার সময় গলার স্বরথলি এবং স্বরনালী একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মাত্রার কম্পাংকে কাঁপতে থাকে। এই কম্পাংকের পরিবর্তন আমরা যথাযথ চর্চা ও পরিশীলন এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। যখন আমরা বলি ‘সা’ তখন স্বরথলি প্রতি সেকেন্ডে ২৫৬ বার কাঁপে, অর্থাৎ এর কম্পাংক ২৫৬ হার্টজ। সেকেন্ডে একবার কম্পনকে এক হার্টজ( Hertz ) বলি। ‘সা’ তে কম্পাংক ২৫৬ হার্টজ, ‘রে’ তে ২৮৮ হার্টজ, ‘গা’ তে ৩২০ হার্টজ, ‘মা’ তে ৩৪১, ‘পা’ তে ৩৮৪, ‘ধা’ তে ৪২৭, ‘নি’ তে ৪৮০, তারার ‘সা’ তে ৫১২ হার্টজ। পাশ্চাত্যে সা রা গা মা পা ধা নি স কে বলেdo, re, mi, fa, sol, la, ti, do. দুটি সুরের কম্পাঙ্কের অনুপাতকে অবকাশ বা ব্যবধান বা সুরবিরাম বলি। সঙ্গীতের দুটি সুরের মধ্যে পার্থক্য আমাদের কানে ধরা পড়ে কম্পাঙ্কের জন্য নয়, কম্পাঙ্কের অনুপাতের জন্য। অনুপাত সরল হলে শ্রুতিমধুর হয়। আর জাটল হলেই বিরক্তিকর শব্দ উৎপন্ন হয়। গানে সুর দেয়া মানে হলো সরল অনুপাত সৃষ্টি করা।

যে সকল সুর সঙ্গীতের জন্য উপযোগী তাদেরকে স্বর বলা হয়। দুই বা ততোধিক স্বর একসঙ্গে বাজালে তাকে স্বরসঙ্গতি ( Chord )  বলে। একটি সুরের কম্পাংক অন্যটির দ্বিগুণ হলে প্রথমটির কম্পাংক দ্বিতীয়টির অস্টক (Octave ) বলে। এর জন্য তারার সা মুদারার সা এর দ্বিগুণ। নির্দিষ্ট কম্পাংকের কোন শব্দ এবং এর স্টকের মধ্যবর্তী শব্দকে ছয়টি শব্দে বিভক্ত করে যে শ্র“তিমধুর সুর সৃষ্টি করা হয় তাকে স্বরগ্রাম বলা হয়। স্বরগ্রাম ৭টি ক্রমবর্ধমান কম্পাংক দ্বারা গঠিত।
এদেরকে C, D, E, F, G A, B  দ্বারা সূচিত করা হয়। C হলো স্বরগ্রামের সর্বাপেক্ষা নিুস্বর। এর জন্য C কে প্রধানসুর বা মূলসুর বা মৌলিক সুর বলি। আমরা গলা সাধার জন্য যে স্কেল নির্ধারণ করি তা মৌলিক সুর নিধাূরণ। C ও D এর মধ্যবর্তী স্থানে আরেকটি সুরকে C শার্প বলি। এভাবে D  শার্প, F শার্প। C এর অস্টককে চড়াসুর বা তারা বলি।

সঙ্গীতের স্বরগ্রামে প্রধান সুরের অস্টকসহ মোট ৮টি ক্রমবর্ধমান কম্পাংকের মিলিত সুর থাকে বলে একে দ্বিমাত্রিক স্বরগ্রাম বলা হয়।D:C, G:F এবং B:A  এই অনুপাতগুলোকে প্রধান টোন ( Major Tone ) বলা হয়। গান গাওয়ার সময় গলার সাথে মিলিয়ে স্বরগ্রামের যে কোনো প্রধান সুরকে পছন্দ করে নেয়া হয়। এজন্য ডায়াটোনিক স্বগ্রামের ৭টি সুর দিয়ে সব সময় সুরের পূর্ণতা পায় না। তাই আরো পাঁচিটি বিকৃত সুরকে ডায়াটোনিক স্বরগ্রামের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এদেরকে কড়ি ও কোমল বলা হয়। না ও পা এর কোন বিকৃত সুর নেই। মা এর বিকৃত সুরকে কড়ি এবং অন্যান্য বিকৃত সুরকে কোমল বলা হয়। সুরকে আরো বেশি শ্র“তিমধুর করার জন্য তারযন্ত্রে আরো সুক্ষাতিসূক্ষ সুর সৃষ্টি করা হয়েছে। সঙ্গীতের ভাষায় একে বলা হয় নোট। এই সব নোট নিয়ে সঙ্গীতের মোট ২২টি সুর বিবেচনা করা হয়।

তিনটি সুরের কম্পাংকের অনুপাত ৪:৫:৬ হলে এরা মিলিত হয়ে একটি সুমধুর সুর উৎপন্ন্ করে। যেমন- সা-গা-পা, মা-ধা-সা। এদেরকে ত্রয়ী বলে। আবার যদি চারটি সুর মিলিত হয় ৪:৫:৬:৮ অনুপাত, অর্থাৎ ত্রয়ীর সাথে নিুতম কম্পাংকের অস্টক মিলিত হয়, তবে আরো সুন্দর স্বর উৎপন্ন করে। এই সমন্বয়কে স্বরসঙ্গতি বলে। কতগুলো শব্দ একের পর এক ধ্বনিত হয়ে একটি সুমধুর স্বরের সৃষ্টি করে তবে তাকে স্বরমরুূর্য বা মেলোডি ( Melody ) বলে। পাশ্চাত্য স্বরমাধুযের ওপর ভিত্তি করে ত্রয়ী ও স্বরসঙ্গতি সমন্বয় করে গাওয়া হয়। আর বংলাদেশ ও ভারতে স্বর মাধুর্যকে ভিত্তি করেই সঙ্গীত সুরারোপ করা হয়। একটি মাত্র বাদ্যযন্ত্র বাজালে অথবা একজন শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করলে তাকে সলো বা একক সঙ্গীত বলা হয়। একাধিক বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে স্বরমাধুর্য সৃষ্টি করা হলে তাকে অর্কেস্ট্রা ( Orchestra )  বলা হয়। একাধিক কম্পাংকের শব্দকে স্বর, আর একটি মাত্র কম্পাংকের শব্দকে সুর বলা হয়। স্বরের মধ্যে সর্বনিু কম্পাংকের শব্দকে মূলস্বর বা মৌলিক সুর, আর অন্যগুলোকে উপসুর বলা হয়। উপসুরগুলি মূলসুরের সরলগুণিতক হলে এদেরকে একত্রে সমমেল বা হারমোনিক (Hermonic) বলি।

একটি শ্রুতিমধুর শব্দ আমাদের কানের পর্দায় আঘাত করার পর এর অনুভূতি স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিস্কে প্রবেশ করে। মস্তিস্কের নিউরনে অনবরত অনুরণন সৃষ্টি করে। এর সাথে গানের কথার অর্থ মস্তিস্কে একটা অসনুভূতির সৃষ্টি করে এবং আমাদের চিন্তায় প্রভাব ফেলে। ধনাত্মত ( Positive )  ভাবনার সৃষ্টি করে।

উদীচীর গানগুলো সাধারণত মেহনতি মানুষের বঞ্চনার কথা, অভাব অভিযোগের কথা দিয়ে রচিত হয়। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার কথা দিয়ে রচিত হয়। ফলে মানুষের মস্তিস্কে এক ধরনের আলাদা রকমের চেতনার উদ্ভব হয়। এই চেতনা মস্তিস্কের সিনপ্স এর মাধ্যমে সারা দেহের স্নায়ুতন্ত্রে সঞ্চারিত হয়। রক্তে একটা আলাদা রকমের দোলা দেয়। মানুষকে ন্যায়ের সংগ্রামে উজ্জীবিত করে। সুস্থ স্বাভাবিকভাবে খেয়ে পরে বাঁচার স্বপ্নে বিভারে করে তোলে। তার কল্পনা শক্তিকে জাগ্রত করে। মানুষের জ্ঞানের চেয়েও বড় শক্তি হলো কল্পনাশক্তি- বলেছেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। আজকে যা কল্পনা, আগামীকাল তা বাস্তব এবং পরদিনই তা তথ্য ও জ্ঞান। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় উপযুক্ত কথা ও সুরের সমন্বয়ে সৃষ্ট সঙ্গীত সহজেই মানুষকে বিহ্বল করে তোলে। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করার প্রেরণা জাগ্রতকারী কথা আর শ্র“তিমধুর সুরযুক্ত গান মস্তিস্কের নিউরনকে অনুরণিত করতে পারে। ফলে তার চিন্তা চেতনা প্রভাবিত হয়। ১৪-১৫ কোটি নিউরনকে পতিনিয়ত এই ধরনের প্রেরণাদাত্রী সঙ্গীত অনুরণিত করতে করতে অধিকার আদার্য়ে জন্য মানুষকে প্রাণ দিতে প্রণোদিত করতে পারে। যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বংলা বেতার কেন্দ্রের গান।

কাজেই সঙ্গীত মারুষকে পরিশীলিত করে একবারেই মাতৃগর্ভ থেকেই। আমাদের উচিত প্রত্যেক শিশুকে গান শোনার এবং গান গাওয়ার সুযোগ করে দেয়া। মাতৃগর্ভ থেকেই শিশুর প্রতি আমাদের দায়িত্ব হলো ভরণ পোষণ, শিক্ষা বস্ত্রের সাথে, খেলাধূলার সাথে তার উপযোগী করে গান শোনানোর ব্যবস্থা করে দেয়া।

অবশ্য আমাদের মায়েরা সেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন ঐতিহাসিক আমল থেকেই। ঘুমপাড়ানি. মাসিপিসির গান আমাদের মায়েরা সারা দেশের শিশুকে শুনিয়ে থাকেন। সুরের কী যাদু! একটা শিশুকে অনায়াসেই মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়তে সহায়তা করে। আবার সেই সুর শিশুর ঘুম ভাঙ্গিয়ে তোলে। ঘুমন্ত শিশুর কাছে জোরে কোন শব্দ হলে সে জেগে ওঠে কাঁদতে থাকে। এই কান্না হলো তার অধিকারের কান্না। তার হাত পা ছুড়াছুড়ি হলো বিপ্লব। এই ঘুম যাওয়া, ঘুমভাঙ্গা কান্না সবকিছুর সাথেই সঙ্গীতের সম্পর্ক। শিশুর মস্তিস্কের নিউরনগুলো সঙ্গীত দ্বারাই অনুরণিত।

প্রকৃতি কিন্তু বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সঙ্গীত শুনিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতিতে সঙ্গীতের ব্যবহার করতে পারে এমন প্রাণী শুধু মানুষই নয়। পাখির কলকাকলি একটি শ্র“তিমধুর সঙ্গীত। নদীর কলতান, ঝর্ণার উচ্ছাস, ঝড়ের তান্ডব, সমুদ্রের গর্জন প্রত্যেকটি এক এক ধরনের প্রকৃতি প্রদত্ত সঙ্গীত। নিঃসন্দেহে মানুষের সৃষ্ট সঙ্গীত এর চেয়ে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

সঙ্গীত রাজনীতিকে অত্যন্ত ধনাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। প্রত্যেকটি দেশেই কোনো রাষ্ট্রীয় কাজ সঙ্গীত বা গান দিয়ে শুরু হয়। একে বলি সেই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। কোন গানকে জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করা হবে, তা সেই দেশের মানুষ ঠিক করে নেয়। আমাদের যেমন ‘ আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালবাসি’। কেনো আমরা জাতীয় সঙ্গীত দিয়েই শুরু করি? কারণ আমরা চাই আমাদের প্রতিটি কাজ একটি ভালোলাগার মধ্য দিয়ে শুরু হোক। একটা জাতীয় চেতনা, দেশপ্রেম জাগ্রতকারী কথা ও সুর দিয়ে দেশের প্রতি আমাদের মমত্ববোধ, মাতৃভাব জাগ্রতকারী প্রেরণার উদ্ভব হোক। দেশকে ভালবাসতে অনুপ্রাণিত হই। গানের এতো শক্তি।

প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন আমরা সঙ্গীত দিয়ে শুরু করি। কারণ এই সঙ্গীত আমাদের বাহ্যিক অবস্থাকে পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে নাড়ির সাথে সংযোগ করে দেয়। আমাদের হৃদপিণ্ড যে প্রতি মিনিটে ৭২ বার স্পন্দিত হচ্ছে, তার একটা ছন্দ আছে। একটা তাল আছে। লয় আছে। জন্মগতভাবেই প্রতিটি মানুষ তাল-লয় এর সাথে সম্পর্কিত। মানুষই শুধু নয়, প্রতিটি প্রাণীরই তালের মাত্রা জানা আছে। এক সাথে অনেকগুরো ঘোড়া দৌড়াতে থাকলে একতালেই তারা পা ফেলে। এর ব্যতিক্রম হয় কি? হৃদপিণ্ডের ছন্দপতন হয় একবারই, মৃত্যুর সময়।

বর্ষার মেঘের গর্জনে ময়ূর খুব সুন্দর করে পেখম তুলে নাচতে থাকে ময়ূরীকে আকর্ষিত করতে। সেই পেখম তুলা নাচে ময়ূরী তার ডাকে সাড়া দেয় তার সাথে মিলিত হতে, বংশ বিস্তার করতে। কারণ প্রকৃতি চায় তার প্রতিটি প্রাণী টিকে থাকুক স্বাভাবিক বংশ বিস্তারের মাধ্যমে। এর জন্য প্রকৃতি সঙ্গীতের একটি শাখা নাচকে বেছে নিয়েছে ময়ূরীকে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য।

কাজেই উদীচীর শিল্পীকর্মীরা সঙ্গীতের মাধ্যমে মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্যেরই লালন করে থাকে। সঙ্গীতের মাধ্যমেই মানুষের ঘুমন্ত চেতনাকে জাগ্রত করার চেষ্টায় ব্রতী হয়।

যারা বলে গান ভালবাসে না, তারা মানুষের প্রকৃতিজাত প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণ করে। প্রতিক্রিয়াশীল এইসব মানুষ তো মানুষ নয়, তারা মানবতার শত্র“। উদীচীর গান তাদের বিরুদ্ধে। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে। এই জন্যই উদীচীর শিল্পীরা গান শুনতে গিয়ে প্রাণ দেয়। গান গাইতে গিয়ে প্রাণ দেয়, গান বাঁধতে গিয়ে প্রাণ দেয়। এই প্রাণ দেয়াটা মানুষের জন্য মানুষের কাজ।

প্রাণ পাওয়া, প্রান ধারণ, প্রাণ গুছানো, প্রাণ দেওয়া প্রতিটি কাজেই সঙ্গীত একটি অত্যন্ত উপযোগী অনুসঙ্গ।