গানে, আবৃত্তিতে, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় উদীচী’র রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত স্মরণ

Rabindro-Nazrul_Sukantoগান, আবৃত্তি, নাচে এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বাংলা সাহিত্যের তিন অগ্রযাত্রী, বাঙালির মানস গঠনে অপরিহার্য্য ভূমিকা রাখা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যকে স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এই তিন মহান সাহিত্যিকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদ গত ১৬ আগস্ট শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজন করে রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে তিন কবির গান পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা।

এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান, উত্তরা ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক ড. তাহা ইয়াসিন এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী।

আলোচনা সভায় ‘সঙ্গীত ও রবীন্দ্রনাথ’ বিষয়ে নিজের লেখা প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান। এই প্রবন্ধে তিনি বিশ্বকবির সঙ্গীত ভাবনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। এরপর ‘দেশকালের প্রেক্ষাপটে নজরুলের জীবন’ বিষয়ে আলোচনা করেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক ড. তাহা ইয়াসিন। বর্তমানের অস্থির সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের নানা কথা প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন তিনি। সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে রাজনৈতিক আদর্শ এবং চিন্তাচেতনা নিয়ে আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। খুবই অল্প বয়সে মারা গেলেও সেই স্বল্প ব্যপ্তির সাহিত্যিক জীবনে কিশোর কবি সুকান্ত কীভাবে বাম প্রগতিশীল ধারার চিন্তাচেতনার জগতে অনবদ্য ভঙ্গিমায় পদচারণ করেছেন এবং নিজের স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন সে বিষয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা করেন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। আলোচনা সভায় বক্তারা অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজ গঠনে এই তিন কবি অসামান্য অবদান রেখেছেন। মূলত তাঁদের রচনার অনুপ্রেরণাতেই বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস পেয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তারা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িকতা বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে, সব ধরনের মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য্য সবসময়ই আলোকবর্তিকা হিসেবে আমাদেরকে পথ দেখাবেন। আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

আলোচনা সভার পর দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বের শুরুতে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন কাজী মদিনা এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন। একক পরিবেশনার পর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের গ্রন্থনায় আলেখ্যানুষ্ঠান “হে সাথী আজকে স্বপ্নের দিন গোনা” নিয়ে মঞ্চে আসেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। গান, আবৃত্তি ও নৃত্যের সমন্বয়ে অনবদ্য আলেখ্যানুষ্ঠানটি মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন মিলনায়তনে উপস্থিত দর্শকরা। এ পর্ব শেষে একক ও দলীয় পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের অন্তর্ভুক্ত মিরপুর, উত্তরা, কাফরুল এবং সাভার শাখা সংসদের শিল্পীরা। সবশেষে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ আয়োজিত রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী অনুষ্ঠান।