একুশের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শহীদ দিবস পালন করলো উদীচী

Ekushe Onushthanমহান একুশের চেতনায় সমৃদ্ধ একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে একুশে ফেব্র“য়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। অমর একুশে উপলক্ষে গত ২১ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত “রক্ত শপথে তোমায় স্মরণ করি” শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন উদীচী নেতৃবৃন্দ। উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে (জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে) শুক্রবার বিকাল চারটায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, হাবিবুল আলম, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি নিবাস দে এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান।

Ekushe Onushthan 02আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি আহমদ রফিক বলেন, একুশে এবং মহান স্বাধীনতার অর্জনের পর জাতি হিসেবে বাঙালিরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে। আর, এর সুযোগে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আইন-আদালতেও বাংলা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া, বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও রীতি অনুযায়ী প্রভাত ফেরির মাধ্যমেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের রীতি প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান আহমদ রফিক। রাত বারোটা এক মিনিটে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন বাঙালি সংস্কৃতির সাথে কখনোই মেশে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে দুই ভাগে বিভক্ত করার কিছুদিনের মধ্যেই বাঙালি বুঝতে পেরেছিল নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা হবে না। তারই প্রতিফলন ঘটে ১৯৪৮ সালে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ওই ঘোষণার ধারাবাহিক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষায় সেদিন পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে রাজপথে প্রাণ দেন রফিক, শফিউর, সালাম, বরকত, জবক্ষারসহ বেশ কয়েকজন তরুণ। তাঁদের আত্মবলিদানের বিনিময়ে বাংলা তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। রক্ষিত হয় বাঙালির বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার। মহান একুশই পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ভিত্তিপ্রস্তর রচনা করে বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

আলোচনা সভার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে সঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ও গেন্ডারিয়া শাখার শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন “আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি”, “ওরা আমার মুখের ভাষা”, “রক্ত শিমুল তপ্ত পলাশ দিল ডাক সুনীল ভোরে”, “ঘুমের দেশের ঘুম ভাঙাতে ঘুমিয়ে গেল যারা” প্রভৃতি গান। সঙ্গীত পরিবেশন করেন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতা থেকে আগত “হান্ড্রেড মাইলস”-এর সদস্যরা। এছাড়া ছিল উদীচী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের পরিবেশনায় নাটক “পোড়া লাশের মিছিল”। সবশেষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক উদীচী’র প্রযোজনা গীতি আলেখ্য “ইতিহাস কথা কও” পরিবেশন করা হয়।