অষ্টাদশ জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা

অষ্টাদশ জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা

 

 

শৌর্যে বীর্যে অতুলনীয় এ জাতি

কথিত আছে দ্বিগবিজয়ী আলেকজান্ডার এ উপমহাদেশ আক্রমণ করলে ১০ হাজার হস্তীআরোহী ৬০ হাজার অশ্বারোহী যুদ্ধে

যোগ দিয়েছিলো এ বাঙলা থেকে । মোগলরা কখনো বাঙলার বারভূঁইয়াকে বাগে আনতে পারেনি। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী, সপ্তম নৌবহর, দেশীয় জামাত-আলবদর-রাজাকাররা বিজয় ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। বাঙলার চুড়ান্ত বিজয় ঘটেছিলো ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের আত্ম-সর্মপনের মধ্য দিয়ে।

খুনিরা বারবার এসেছে ফিরে কিন্তু ধিকৃত হয়েছে প্রতিবার – বিশ্বাস হননের কারণে।

মীর জাফর ধিকৃত হয়ে ঘৃনিত লোকমুখে

রাজাকার আলবদর পরিণত গালিতে

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরা ঝুলেছে ফাঁসিতে

৭১ এর যুদ্ধ অপরাধীরা ও ঝুলবে ফাঁসিতে

ঘাতকের নিস্তার নেই, আপোষ নেই।

 

সংকটে সংগ্রামে এ জাতি বিলিয়ে দেয় প্রাণ অকাতরে

পলাশীর যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিল মোহনলাল মীরমদন এরা

বাহান্নয় প্রাণ দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকতেরা

উনসত্তরের গণঅভ্যূথানে আসাদেরা

একাত্তরে লাখো লাখো মুক্তিসেনানীরা

স্বাধীন বাংলায় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতায় মতিউল কাদের এরা

ফুলবাড়ীতে, কানসাটে, সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে

যশোরে উদীচী সম্মেলনে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাজপথে অবিরত-অকাতরে ঢালছে প্রাণ এ জাতি। যতদিন এদেশে থাকবে সা¤্রাজ্যবাদী ঈগলের থাবা, শোষিত মানুষের হাহাকার, র্ধমান্ধ মৌলবাদীদের আস্ফালন, অপসংস্কৃতির ঝংকার আর সাংস্কৃতির বাণিজ্যিকীকরণ।

 

ততদিন প্রাণ দেবো শত্রæর হাতে

মুক্তির ফুল ফুটবে সে সংঘাতে

এ আমাদের ঘোষণা

 

২২.১২.১২

৮ পৌষ, ১৪১৯ শনিবার

পাবলিক লাইব্রেরী

শওকত ওসমান মিলনায়তন

 

 

সাধারণ প্রস্তাব

 

  • এই সম্মেলন ধর্মীয় মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রারাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের বিবেকবান, প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
  • এই সম্মেলন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরাজমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিহার, দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
  • অর্থনৈতিক বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সমমনা সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সাথে নিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
  • দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে সংগতিবিহীন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
  • পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন একই সূত্রে গাঁথা। তাই নদী- খাল- বিল- লেক- হাওর, দখল- ভরাট, দূষণসহ পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন গতিশীল করার আহ্বান জানাচ্ছে।
  • মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা দানকারী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে সরকারি নিয়ন্ত্রনে এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।
  • সংবিধান থেকে সাম্প্রদায়িক ধারাসমূহ বাতিল, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, আদিবাসীদের সাংবিধানিক ¯^ীকৃতি দিয়ে ‘৭২-এর সংবিধানের মূল চেতনা পুণঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনের দাবী জানাচ্ছে।
  • আজকের সম্মেলন গার্মেন্টস সহ শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ন্যায় সংগত দাবীর সাথে সংহতি জ্ঞাপন করছে এবং তাদের যুক্তিসংগত আন্দোলনে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।
  • বিভিন্ন ধরনের মিলনায়তন ও চত্বর ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন র্শত আরোপ এবং ভাড়া র্নিধারণ ও ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সংকুচিত করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা করছে আজকের এই সম্মেলন ।
  • অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার বানচালের যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহŸবান জানাচ্ছে এ সম্মেলন ।
  • সারাদেশে অনুষ্ঠান করার উপযোগী নতুন মিলনায়তন ও উন্মুক্ত মঞ্চ গড়ে তোলার ব্যাপারে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা জানাচ্ছে এই সম্মেলন।
  • এ সম্মেলন খাদ্যে ভেজাল বিরোধী ও ফরমালিন বিরোধী আন্দোলন জোরদার করার আহবান জানাচ্ছে।
  • শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, ছাত্র, যুব, নারী ও পেশাজীবী সংগঠন সমূহের ন্যায্য দাবিসমূহের প্রতি উদীচী একাত্মতা প্রকাশ করবে। এবং সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে থাকবে।

 

 

সাংগঠনিক প্রস্তাব

  • আগামী ২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সংগঠনের শাখা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া যেসকল জেলায় সংগঠন নেই সেসব জেলায় সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। নিষ্ক্রিয় ও আধা-সক্রিয় জেলা ও শাখা সংসদসমূহকে সক্রিয় ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। কলেজসমূহে সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
  • শাখাসমূহের সঙ্গে জেলা সংসদের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় সার্কুলার, চিঠিপত্র ও তাৎক্ষণিক কর্মসূচির বার্তা জেলা সংসদের মাধ্যমে শাখায় দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
  • প্রতিটি জেলায় ও শাখায় পারফরমিং বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সংগঠনের সকল স্তরে সকল কার্যক্রমে সাংগঠনিক রীতি পদ্ধতি গুরুত্বের সাথে অনুশীলন করতে হবে।
  • সাধারণ মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে শাণিত করা ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লোকজ উৎসব আয়োজন করতে হবে এবং এর ব্যয় নির্বাহের জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
  • জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে নিজেদেরকে সর্বোতভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে।
  • কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত কর্মসূচি (শাখা ও জেলার জন্য প্রযোজ্য) জেলা ও শাখায় বাধ্যতামূলকভাবে পালন করতে হবে।
  • শৈশব থেকে প্রগতিশীল সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল স্থানে উদীচীর পরিচালনায় শিল্পকলা বিদ্যালয় ও শিশু-শিক্ষা বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
  • বিদেশে উদীচীর শাখা গড়ে তোলা ও সাংগঠনিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিদেশে শাখাসমূহের মধ্যে সমš^য় রক্ষার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
  • বাংলা একাডেমী প্রণীত প্রমিত বাংলা বানান-রীতি উদীচীর সকল প্রকাশনায় ব্যবহৃত হবে।

 

 

 

ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের সংশোধনী

১। ঘোষণাপত্রে পৃষ্ঠা ৩ প্রথম প্যারা ৪র্থ লাইনে “বাঙালির বিপুল ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সংস্কৃতি” এর পরিবর্তে হবে “আমাদের বিপুল ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সংস্কৃতি”।

 

২। পৃষ্ঠা ৮ জ. ১ (ক) গঠন ৫ এর প্রথম শব্দ “পূর্ববর্তী” শব্দটি বাদ যাবে।

 

৩। পৃষ্ঠা ১১ জ ৩। কেন্দ্রীয় সংসদ (ক) গঠন এর সংশোধনী

  • কেন্দ্রীয় সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৭৫ জনের পরিবর্তে ৯১ জন হবে।
  • সহ-সভাপতি ১১ জনের পরিবর্তে ১৭ জন হবেন।
  • সদস্য সংখ্যা ৪৮ জনের পরিবর্তে ৫৮ জন হবে।

৪। পৃষ্ঠা ১৩ জ ৪। জেলা সংসদ (ক) গঠন এর সংশোধনী

  • জেলা সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪১ জনের পরিবর্তে ৪৭ জন হবে।
  • সহ-সভাপতি ৩-৭ জনের পরিবর্তে ৩-৯ জন হবেন।
  • সম্পাদকের সংখ্যা ৪-৮ জনের পরিবর্তে ৪-১০ জন হবে।
  • সদস্য সংখ্যা ৮-২০ জনের পরিবর্তে ৮-২২ জন হবে।