অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে উদীচী’র শোক

অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে উদীচী’র শোক

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর মৃত্যুতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ গভীরভাবে শোকাহত। আজীবন ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী কবীর চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো বলে মনে করছে উদীচী।
১৯২৩ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি জন্ম নেয়া কবীর চৌধুরী ১৯৪০’এর দশকের প্রথম দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসী বাহিনীর নির্মমতায় ব্যথিত কবীর চৌধুরী গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও উদারপন্থী চিন্তাভাবনায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী কবীর চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার লেখনীর মাধ্যমে হানাদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি “বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল”-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে, “একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির” সাথে যুক্ত হয়ে তিনি আধুনিক বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের দোসর রাজাকার, আল-বদর ও যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে চেতনাসমৃদ্ধ একটি সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে গঠিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অধ্যাপক কবীর চৌধুরী নিয়মিতভাবে এর কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং নানা সময়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে সংগঠনটির ব্যাপ্তিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
এই মহান শিক্ষাবিদ, কর্মযোগী ও সংস্কৃতি কর্মীর অকাল প্রয়াণে শোক জানানোর পাশাপাশি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল আলম। তারা আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি কর্মীরা অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে হারানোর শোক সহ্য করে তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।