পটচিত্রশিল্পী রঘুনাথ চক্রবর্তীকে স্মরণ

অকাল প্রয়াত পটচিত্রশিল্পী রঘুনাথ চক্রবর্তীকে স্মরণ করলো উদীচী

গভীর শ্রদ্ধায় বাংলা ভূখণ্ডের অন্যতম প্রাচীন চিত্রকর্মের মাধ্যম পটচিত্রের বিশিষ্ট শিল্পী রঘুনাথ চক্রবর্তীকে স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গত ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত স্মরণ সভার শুরুতে প্রয়াত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অকাল প্রয়াত পটচিত্রশিল্পী রঘুনাথ চক্রবর্তীকে স্মরণ করলো উদীচী
অকাল প্রয়াত পটচিত্রশিল্পী রঘুনাথ চক্রবর্তীকে স্মরণ করলো উদীচী

এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মতলুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা পর্ব। এ পর্বে রঘুনাথ চক্রবর্তীর জীবন ও কর্মের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শংকর সাওজাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, চিত্রশিল্পী দিলদার হোসেন, উত্তম ঘোষ ও নাজির হোসেন, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস, উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান ইকবাল এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ ঘোষ। আলোচনায় বক্তারা বলেন, পটচিত্রের মতো একটি মাধ্যমকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন শিল্পী রঘুনাথ চক্রবর্তী। পটচিত্র তথা বাংলাদেশের চিত্রকলায় তাঁর অসামান্য অবদান জাতি আজীবন মনে রাখবে। তাঁর অকাল প্রয়াণে এদেশের পটচিত্র শিল্পে যে শুন্যতা সৃষ্টি হলো তা অপূরণীয় বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

১৯৬৯ সালের ১ নভেম্বর গাইবান্ধায় জন্ম নেয়া রঘুনাথ চক্রবর্তী ছবি আঁকার ব্যাপারে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তবে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব তাঁর ভেতরের অনবদ্য প্রতিভার বিকাশ বা শিল্পীসত্ত্বার বহিঃপ্রকাশকে কখনোই বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। পটচিত্রশিল্পে তিনি বাংলাদেশের প্রথম সারির শিল্পীদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মূলত মা অঞ্জলি চক্রবর্তীর আলপনা আঁকা দেখে পটচিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন রঘুনাথ চক্রবর্তী। সরকারি চাকুরে বাবা তাঁর পড়াশোনা নিয়ে কঠোর থাকলেও মা’র কাছে সবসময়ই প্রশ্রয় পেয়েছেন তিনি। গণিতের খাতায় করা ছেলের চিত্রকর্ম সযতেœ বাবার দৃষ্টিসীমার বাইরে রাখতেন মা। মায়ের প্রশ্রয়েই ধীরে ধীরে বাড়ির দরজা-জানালা, শ্রেণীকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ড এমনকি বইয়ের মলাটেও রঘুনাথ চক্রবর্তী এঁকে রাখতেন লতাপাতা, হাতি-ঘোড়ার ছবি। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করে চাকুরিতে যোগ দিলেও খুব বেশিদিন বাঁধা-ধরা জীবনে থাকতে পারেননি।

ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগার বিভিন্ন বিষয় যেমন গ্রামের পালা, পার্বণ, যাত্রা প্রভৃতিই ছিল রঘুনাথ চক্রবর্তীর পটচিত্রের মূখ্য বিষয়বস্তু। মূলত পটচিত্রের মাধ্যমেই জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছেন তিনি। নৌকাবাইচ, তাঁতির কাপড় বোনা, কলসি কাঁখে নারী, আয়নার সামনে গ্রামীণ কিশোরী, বঁটিতে পল্লীবধূর মাছ কাটা, নাচের ভঙ্গিতে ঢুলি, দইওয়ালা, ধোপার কাপড় কাচা প্রভৃতি গ্রাম-বাংলার আবহমান চিত্রগুলোই তাঁকে সবসময়ই আকর্ষণ করতো। দেশীয় সংস্কৃতির বাইরে কাজ করেননি এই পটচিত্রকর। জাপানে রঘুনাথ চক্রবর্তীর প্রদর্শনী হয়। এছাড়া, সোনারগাঁয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরেও রঘুনাথ চক্রবর্তীর কাজ সংরক্ষিত রয়েছে। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে গত ২১ নভেম্বর শনিবার দিবাগত রাত তিনটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পটচিত্রশিল্পী রঘুনাথ চক্রবর্তী। তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৬ বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *